বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে মন্তব্য, লাইভে এসে মেয়রের কান্না

| আপডেট :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০১:০২  | প্রকাশিত :  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০১:০২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করলে ‘পাপ হবে’ নিজের এমন বক্তব্যে যখন তোলপাড় চলছে তখন ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। এর আগে, তিনি ওই কথোপকথনকে ‘এডিট করা’ দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তবে শুক্রবার বিকালে ফেসবুকেই লাইভে এসে তিনি নিজের ওই মন্তব্য স্বীকার করে নেন।

গত সোমবার মেয়র আব্বাসের দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহীসহ দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। আব্বাসের শাস্তির দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে। মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে মেয়র আব্বাস গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি ফেসবুকে লাইভে আসেন।

লাইভের শুরুতেই আব্বাস ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিওটি মনোযোগ সহকারে শোনার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাকে নিয়ে কটূক্তির দুঃসাহস তার নেই। তিনি কটূক্তি করেননি। তবে ম্যুরাল নিয়ে তার কথা আছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা বড় মাদ্রাসা আছে। মাঝে মধ্যেই জানাজা বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে আমার যাওয়া হয়। গেলে শিক্ষকদের সাথে মাঝে মধ্যে বসা হয়। যতটুকু মনে আছে, কোনো জানাজায় ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানকার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মাহমুদ সন্দিপী। আমি যতটুকু দেখেছি, আল্লাহর রাস্তা ছাড়া দুনিয়াদারির কোথাও তাকে পাইনি। তিনি কষ্ট করে মাদ্রাসাটা গড়ে তুলেছেন। তার শিষ্যরা সারা বাংলাদেশে বিচরণ করছেন। সারারাত তিনি নামাজ পড়েন। তার হাঁটুতে ব্যথা, উঠতে পারেন না। আমার যতটুকু মনে হয়েছে, তিনি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহওয়ালা একজন মানুষ।

আমার সন্দেহ নাই। আমি মাদ্রাসায় বসেছি, তিনি আমাকে বললেন- তার ছাত্র তাকে কাটাখালি গেটের ভিডিও দেখিয়েছেন। তিনি বললেন, ম্যুরালটার বিষয়ে কোনো চেঞ্জ আনা যায় না? আমি বললাম, কী সমস্যা? উনি ব্যাখ্যা দিলেন। বোঝালেন। আমি শুনেছি। আমি তো মানুষ, আমি তো একটা মুসলমান। আল্লাহর কথায় আসলে কে না দুর্বল হয়। আমিও একটু দুর্বল হলাম। আমি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। বলেছি- ম্যুরালটা করলে ইসলামে ঠিক হবে না। এটা পাপ হবে। আড্ডার মধ্যে অনেক গল্পই তো মানুষ করে। আমিও হয়ত করেছি। হয়ত ভুল করেছি, কিন্তু কত বড় ভুল করেছি?

কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়র বলেন, আমি তো মানুষ। আমি তো ভুল করতেই পারি। তার জন্য ক্ষমা চাই। তারপরও মনমতো না হলে বহিষ্কার করবেন, আমার নামে মামলা দেবেন যতটুকু ভুল করেছি তার জন্য। কিন্তু একের পর এক অত্যাচার জুলুম। আমার অসুস্থ মা তিন-চার দিন না খেয়ে আছেন। বাড়িতে মাদক রেখে আমার মাকে-বউকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের হুমকি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। আমি কী এত বড় অন্যায় করেছি? অন্যায় করলে তো আইন আছে। এভাবে এতকিছু করা কী ঠিক? আমি কত বড় অন্যায় করেছি।

তিনি বলেন, আমাকে বলা হচ্ছে- আমি দলের অনুপ্রবেশকারী। আমি যদি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দল জীবনে করে থাকি তাহলে সব শাস্তি মাথা পেত নেব। ২০০২ সালে যুবলীগ দিয়ে আমার রাজনৈতিক পথচলা শুরু। ৭ মার্চের ভাষণ আমার চোখ খুলে দিয়েছে। তারপর থেকে যুবলীগ করছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল করেছি- কেউ প্রমাণ করতে পারলে সুইসাইড করব।

তিনি আরও বলেন, আমাকে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী বানানো হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার মালিক বানানো হচ্ছে। আমার ব্যাংকে লোন কত সেটা নিয়ে লাইভে আসব। যদি আপনারা মনে করেন বড় অন্যায় করেছি, আমার পাশে দাঁড়ানোর দরকার নাই। যদি আমার ওপর অন্যায় হয় তাহলে পাশে দাঁড়ান। আমি সহযোগিতা চাই। আমার অসহায় মাকে দেখতে দিন। চার মাসের বাচ্চার কাছে যেতে চাই। আমার পাশে একটু দাঁড়ান প্লিজ। আল্লাহর ওয়াস্তে দাঁড়ান।

মেয়র আব্বাস বলেন, আমি যদি বুঝতে পারি, আমার কথায় আপনার বিবেক নাড়া দিয়েছে, তাহলে পর্যায়ক্রমে একটা একটা করে সব খোলস খুলে দেব। আমাকে নিয়ে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার পাশে আপনাদের দরকার। আমি আজ কয়দিন ধরে না খেয়ে আছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে হেল্প করুন। আমাকে বাঁচান প্লিজ।

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত