এক ট্যাবলেটেই মাসব্যাপী নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস!
ইনজেকশনের মাধ্যমে দিনে একাধিক বার ইনসুলিন গ্রহণের পরিবর্তে মুখে খাওয়ার স্বল্পমূল্যের একটি ট্যাবলেট মাসব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম এমন গবেষণায় এরই মধ্যে সফলতা পাওয়া গেছে। আর এই গবেষণায় ৯ সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাতক্ষীরার তরুণ বিজ্ঞানী শাতিল শাহরিয়ার।
বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস ভয়ংকরভাবে বাড়ছে। এর ব্যয়বহুল চিকিত্সায় চিকিত্সকরা সচরাচর নানা ধরনের ওষুধ ছাড়াও ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ইনসুলিন দীর্ঘদিন এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করলে দেহের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে ডাক্তাররা জানান। তবে ইনসুলিনের বিকল্প খাওয়ার ট্যাবলেট ব্যবহার করে এক মাসব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে দাবি করেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খোড়দো গ্রামের তরুণ বিজ্ঞানী শাতিল শাহরিয়ার।
শাতিল বর্তমানে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে এই গবেষণায় নামেন। কোরিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ট্রান্সপোর্টেশন, কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটি এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন বিজ্ঞানী এই কাজে হাত দেন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন শাতিল। ডায়াবেটিস আক্রান্ত তিন জাতের ইঁদুর ও বানরের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করে গবেষকরা সফলতা লাভ করেছেন। এতে দেখা যায়, বারবার ইনসুলিন গ্রহণের পরিবর্তে জিএলপি-১ এগোনিস্ট নামের এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে শরীরের কোষগুলো থেকে প্রতিষেধক তৈরি হয়। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনকি যেসব প্রাণীর ডায়াবেটিসের কারণে যকৃত বা অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোও সেরে উঠতে সাহায্য করে। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ম্যাগাজিন ন্যানো লেটারস ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শাতিল শাহরিয়ার জানান, ইঁদুর ও বানরের ওপর পরিচালিত এই গবেষণালব্ধ ফলাফল তাদের হাতে রয়েছে। তাদের গবেষণায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের স্বীকৃতি পেয়েছে। নতুন ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মানবদেহে সেটি প্রয়োগ করার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছেও তারা আবেদন করেছেন।
তিনি জানান, বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের একটি প্যানেল এই বিষয়ের ওপর গবেষণা চালিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলে তা অনুমোদন লাভ করবে। পরে তা বাজারে আসবে।
শাতিল শাহরিয়ার জানান, দশমিক ৪৮ মিলিগ্রামের এই ক্ষুদ্র ওষুধের মূল্য হবে খুবই কম। এটি পাউডার করে অথবা তরল আকারেও খাওয়া সম্ভব। মাসে একটি মাত্র ট্যাবলেট ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে।
বাবা খোড়দো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম, শাতিল শাহরিয়ার ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করে কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। ঢাকায় অধ্যয়নকালেই ডায়াবেটিসের ওপর তার গবেষণা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সফলতা লাভ করেছে। সে আমার ছেলে এবং বাংলাদেশের সন্তান এজন্য আমি গর্বিত। ওষুধটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ডায়াবেটিস চিকিত্সায় এক যুগান্তকারী অধ্যায় সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত