কিডনির সমস্যা আছে কিনা জানাবে যে ৭ লক্ষণ
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। দেহের রেচন প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ নির্গমনের কাজ করে অঙ্গটি। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি। তাই শুরু থেকে কিডনির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ যদি কিডনির সমস্যার লক্ষণ শুরু থেকে জানা থাকে, তাহলে সমস্যা অল্প থাকতেই চিকিত্সার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই কিডনির সমস্যার লক্ষণগুলো সম্পর্কে-
দুর্বলতা
কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে দুর্বলতা। এই দুর্বলতার প্রধান কারণ রক্তশূন্যতা। কিডনি যদি ঠিকমত কাজ না করতে পারে তাহলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাড সেল উত্পন্ন হয় না। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উত্পন্ন করতে পারে না। এই হরমোন বোন ম্যারো থেকে ব্লাড সেল উত্পাদনে সাহায্য করে।
শ্বাসকষ্ট
যখন কিডনি কাজ কতে অক্ষম হতে শুরু করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতা
কিডনি সমস্যা দেখা দিলে চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয় তাহলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলাফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: আমলকি চায়ের এত গুণ!
শরীরে চুলকানির উপসর্গ
কিডনির অক্ষমতায় শরীরে চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয় কারণ ওই বর্জ্যের মধ্যে ফসফরাস থাকে। যেসব খাবারে ফসফরাস থাকে যেমন দুধজাতীয় খাবার, সেগুলো হজমের পর ফসফরাস বর্জ্য হিসেবে মূত্রের সাথে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করতে থাকে।
মূত্রের রং পরিবর্তন এবং রক্তক্ষরণ
কিডনির সমস্যায় মূত্রের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। কিডনির অক্ষমতায় রেনাল টিউবিউলসের ক্ষতি হয় যা পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এর মানে হচ্ছে আপনার অধিক পরিমাণে মূত্র তৈরির কাজ করে। তবে কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, মূত্রের পরিমাণ ততই কমবে। এবং মূত্রের রং গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা রং হয়ে যাবে। সেই সাথে মূত্রের সাথে রক্তক্ষরণ এবং অত্যধিক ফেনা হতে পারে।
অরুচি
শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। যদি অ্যামোনিয়া রক্তে মেশে তাহলে তা শরীরে প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনির অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি, ওজন হারানোর মত সমস্যার সৃষ্টি করে।
শরীরে ব্যথা
একটি জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটির সৃষ্টি হয়। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনী গুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। এই ব্যথা সাধারণত ভোঁতা অনুভূতি, খোঁচা কিংবা জ্বলুনির মত হতে পারে। সাধারণত এই ব্যথাগুলো শরীরের পেছনের অংশে, পায়ে কিংবা কোমরে হতে পারে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত