ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। শেবাচিম পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বেলা সাড়ে ১২টায় সমকালকে জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন শিশু মারজিয়া (৮) নামে এক শিশু মারা গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ওই লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের দুজন সদস্য জানান, সুগন্ধা নদী থেকে তারা ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, যারা গত রাতে প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
দগ্ধ যাত্রীদের ৭৫ জন বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে, ১৫ জন ঝালকাঠি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শেবাচিম পরিচালক সমকালকে জানান, রোগীদের নারী ও পুরুষ সার্জারী বিভাগ এবং শিশুদের শিশু সার্জারী বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ৭ জন দগ্ধ রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তাদের শরীরের ৮০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় শেবাচিম হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে চার জনকে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা বরিশাল ফায়ার নার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সমকালকে জানান, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে উদ্ধার তৎপরতা শেষ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডি কর্মকর্তারা। এখন প্রমত্তা সুগন্ধা নদীতে অভিযানে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরিরা।
তিনি সমকালকে বলেন, ‘শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আমরা লঞ্চের ভেতরের উদ্ধার তৎপরতা শেষ করেছি। ভেতর থেকে বহু হতভাগ্য যাত্রীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছি। ক’জনের মাথার খুলি আমরা উদ্ধার করেছি। মরদেহ ও দেহাবশেষ আমরা থানায় নিয়ে যাচ্ছি। এই পর্যন্ত ৩৬ জনের মরদেহ আমরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।’
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেলা ১২টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে বলেন, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরণের বন্দোবস্ত করবে। এছাড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে যাদের বাড়ি বরগুনা জেলায় তাদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের সুচিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্য ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ছয় সদস্যবিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে।
লঞ্চটির যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে।ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলে এলে লঞ্চ থেকে কিছু যাত্রী নামতে পেরেছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত ১৫ জন এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
লঞ্চটির ইঞ্জিনরুমের কাছে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত