প্রথমেই মোবাইল চুরি। এরপর দিনাজপুর, গাইবান্ধা, এবং জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প ও সেচ মিটার চুরি এবং মিটারের স্থানে চুরি করা মোবাইলের একটি নম্বর লেখা চিরকুট রেখে আস। আর মিটারের মালিক চিরকুটে লেখা নম্বরে কল দিলেই পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দাবি করা হতো। দাবি অনুযায়ী তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিলেই বলে দেওয়া হতো চুরি হওয়া মিটার কোথায় আছে।
এমন এক মিটার চোর চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শহরগাছী বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে থেকে সিমকার্ডসহ চুরি করা দুটি মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ।
আটককৃত চোর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পিয়ারাপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে ইমতিয়াজ মন্ডল স্বাধীন (৩০)।
এ ঘটনায় দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রানীগঞ্জ জোনাল অফিসের এজিএম আব্দুল মোত্তালেব বাদী হয়ে আটক স্বাধীনসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে গতকাল বুধবার ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘোড়াঘাট থানার উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান বলেন, আটকের পর সে মিটার চুরির কথা স্বীকার করে। সর্বশেষ গত ২৫ তারিখ দিবাগত রাতে সে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানা এলাকার রাধাবাড়ী গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাকিম মন্ডলের সেচ পাম্পের একটি মিটার চুরি করেছে।
পরে আটক স্বাধীনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে পাঁচবিবি থানা এলাকার রাধাবাড়ী গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন একটি খড়ের পালা থেকে চুরি হওয়া একটি মিটার উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, সে খুবই কৌশলী। এই চক্রটিকে নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। তবে সে সুকৌশলী হওয়ায় আমরা একাধিক বার তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। সর্বশেষ প্রযুক্তির সহযোগিতায় দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে তাকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি।
মামলার বাদী এজিএম (ওএন্ডএম) আব্দুল মোত্তালেব বলেন, গত ৩ মাসে শুধুমাত্র ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে প্রায় ৪০টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। মিটার চুরি করে চোরেরা একটি মোবাইল নম্বর লিখে রাখে এবং ওই নম্বরে কল করলে টাকা দাবি করে চক্রটি। মামলায় ভূক্তভোগী ছয় জনের নাম এবং তাদের বিস্তারিত উল্লেখ করেছি।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ছয় মাস চেষ্টা চালিয়ে এই চোরকে ধরতে পেরেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক স্বাধীন জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৪০টি মিটার চুরি করেছে। প্রথমে স্বাধীন এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে দুটি সিমসহ একটি মোবাইল চুরি করে। মিটার চুরি করা পর সে চুরি করা মোবাইলের নম্বর চিরকুটে লিখে দিয়ে আসত এবং ওই নম্বরে চালু থাকা বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলতো। যাতে করে পুলিশ তাকে ধরতে না পারে।
আসামি স্বাধীনকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুরের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই মামলায় পলাতক অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।