ভালবাসার মানুষকে ১৪ বছর যাবত কাঁধে নিয়ে সোহেল

| আপডেট :  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৩৪  | প্রকাশিত :  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৩৪

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: একটি দশ টাকার নোটে অপরিচিত মোবাইল নাম্বার। সেই নাম্বারে মিসকল। অপরপ্রান্ত থেকে আবারও মিসকল। এভাবেই কথার শুরু, কথা থেকেই মনের অজন্তে ভালবাসার শুরু। এরপর বিয়ে। সংসার জীবনের ১৪ বছর স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে চল।

বলছিলাম দেশের একপ্রান্ত ময়মনসিংহের ত্রিশালের রওশন আক্তার ও দেশের অপরপ্রান্ত রাজশাহীর সোহেল মিয়ার প্রেমের কাহিনী। তবে, তাদের এই নজিরবিহীন ভালবাসা সমাজ, পরিবার, সংসারের কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। কিন্তু, এখন তারা সভ্য সমাজের ভালবাসার উদাহরণ।

রওশন আক্তার ত্রিশালের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সোহেল মিয়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার বাসিন্দা। সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেছেন। এখন ছোট্ট মাটির ঘর আর একটি টং দোকানই সম্বল এ দম্পতির। শত কষ্টের মাঝেও ভালোবাসা আর পরস্পর আস্থা-বিশ্বাসই যেন তাদের কাছে সুখের পালক।

 

 

 

 



 

 

 

 

উপজেলার গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে ছোট্ট মাটির ঘর আর একটি টং দোকানই সম্বল এ দম্পতির। শত কষ্টের মাঝেও বিশ্বাসই তাদের কাছে সুখের পালক।

জন্ম থেকেই দুই পা অচল রওশনের। নিজের পায়ে ভর দিয়ে নেই চলার শক্তি। কখনো ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৪ বছর আগে ভালোবেসে রওশনের হাত ধরেন সোহেল।৷ স্বামীর পিঠে চড়েই চলাফেরা করেন। হয়েছেন সন্তানের মা।

 

 

 



 

 

 

 

এ বিষয়ে রওশন আক্তার বলেন, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করেই হাত ধরেছিলাম। এখনোও চলছি। কখনো কোথাও যেতে চাইলে আমি শুধু বলি আর সে তার পিঠে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করে। আমার মনের চাহিদা পূরণের জন্য সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে। তাকে আমি ধন-সম্পদ কিছুই দিতে পারিনি, শুধু আমার ভালোবাসাটুকুই দিয়েছি। আর সে আমার ভালোবাসা নিয়েই এখনো আমার সাথে আছে। আমরা সুখেই আছি।

সোহেল মিয়া বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি করতাম। একদিন বিকেলে অফিস ছুটির সময় আমার টেবিলের ড্রয়ারে থাকা একটি দশ টাকার নোটে একটি নাম্বার লেখা দেখতে পাই। তারপর ওই নাম্বারে একসময় কল করি। সেই কলের মাধ্যমেই রওশনের সাথে আমার পরিচয়। আস্তে আস্তে সেটি গড়ায় প্রেমের সম্পর্কে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আমাদের প্রেমের শুরুটা হলেও আমরা ডিসেম্বরে গিয়ে বিয়ে করি।

 

 

 



 

 

 

 

তিনি আরও বলেন, শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম থাকলেও তার ভেতরে আমার প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি আজ পর্যন্ত পাইনি। একজন স্বাভাবিক মেয়ে স্বামীর জন্য যতটুকুন না করতে পারে সে তার চেয়েও বেশি কিছু করার চেষ্টা করে আমার জন্য। তার মূল গুণটাই হচ্ছে যে সে পুরোপুরি আমার ভক্ত। সে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না আর আমিও তার প্রতি ভালবাসায় মুগ্ধ। চলবে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।

 

 

 

 



 

 

 

 

 

প্রতিবেশীরা এমন নজিরবিহীন ভালবাসার বন্ধনে অবাক। প্রথম অবস্থায় সোহেলকে কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। কারণ প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে করে কিছুদিন পর ছেড়ে চলে যাবে। তবে, তাদের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে তাদের ভালবাসা। রওশনকে পিঠে নিয়ে সোহেল যেভাবে আনা-নেওয়া করে তা দেখে প্রতিবেশীরা অবাক।

 

 

 

 

 



 

 

 

 

বিশ্বাসের নামই ভালবাসা। ভালবাসা অবশ্যই নিঃস্বার্থ হতে হবে। তাহলেই কেবল ভালবাসা টিকে থাকবে পৃথিবীতে, কোন দিবস দিয়ে নয়।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত