সন্তান ও পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরী ছেড়েছেন বিসিএস ক্যাডার মা
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : শুধুই সন্তানদের সময় দেয়ায় না, কর্মস্থলে পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরী থেকে সেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর।
জান্নাত-ই হুর সেতু শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মোঃজাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। স্বামী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানোয়ার রাসেল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।
জান্নাত ই হুর সেতু ব্যাক্তিগত জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী, শ্বাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নজরুল সেনা স্কুল রোড এলাকায় বসবাস করেন।
বুধবার (৩১ মার্চ) বিকালে সেচ্ছায় ১০ বছরের চাকুরী জীবনের অবসান ঘটিয়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
সন্তানরা বাবা মায়ের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
শুধু সন্তানদের সময় দেয়ায় নয়, কর্মস্থলে পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরী থেকে সেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর।
তিনি বলেন, পর্দা করে চাকরী করা যাবে বিষয়টা এমন না। আমি যে চাকরীটা করি। সেখানে শুধু মহিলারাই কাজ করেন না। সেখানে পুরুষরা চাকরী করেন। তাছাড়া, কৃষক ও মাঠে গিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় পর্দার খেলাপ হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানরা বাবা মায়ের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নানান দিক চিন্তা করেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের জীবনে উচ্চাকাঙ্খা না থাকায় তেমন কোন চাহিদা নেই। তেমন আর্থিক সংকটও নেই। তাই চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছি।
জান্নাত ই হুর সেতু জানান, আমাদের বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর, মেঝো মেয়ে ৫ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ১৮ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর আমার শাশুড়ী মা লালন পালন করতেন। এখন আরও দুজন বাচ্চা ছোট হওয়ায় বৃদ্ধ শাশুড়ী মা একা পেরে উঠেন না। আর এদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকুরী করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করতে হয়।
এ বিষয়ে জান্নাত-ই হুর’র স্বামী সানোয়ার রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, সে সন্তানদের সময় দিকে চাকরী থেকে সেচ্ছায় অবসর নিয়েছে। তাছাড়া, এটা তার সম্পুর্ণ
ব্যক্তিগত বিষয়। তবে, আমি তার এমন সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, সে খুব ধার্মিক। সব সময় পর্দা করে। সে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে কর্মস্থলে পর্দা তার মত করতে পারছে না। তবে, বিষয়টা এমন না যে মেয়েরা সরকারী চাকরী করতে পারবে না। এটা তার সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত বিয়য়।
সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার মত কাজ সে করেনি। তাই, সংবাদ প্রচার হওয়ায় আমরা কিছুটা বিব্রত বলেও দাবি করেন তিনি। তবে, সম্প্রতি কিশোর কিশোরীর আত্মহত্যা প্রবণতা যেভাবে বাড়ছে। এই দষ্টিকোণ থেকে সন্তানকে সময় দিতে চাকরী থেকে অবসর নেয়া খু্ব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। আমি মনে সকল মা বাবা তার সন্তানকে সময় দেয়া উচিৎ।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা গণমাধ্যমকে জানান, জান্নাত ই হুর সেতু গৌরীপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায় অবসর চেয়ে অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। অধিদপ্তর তার আবেদন অনুমোদন করেছেন। এই সপ্তাহেই চিঠি পাওয়া যাবে।
জান্নাত ই হুর সেতু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, থেকে ২০১১ সালে মাস্টার্স পাশ করেন। একই বছর ২৯ তম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হোন। চাকুরীর পরেই বিয়ে করেন সহপাঠী সানোয়ার রাসেলকে।
তিনি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে বদলি হয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত