নিউইয়র্কে জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মারামারি
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি ঘোষণার পর ঐক্যের বদলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে চরম অনৈক্য দেখা দিয়েছে। গত এক দশকে কমিটি না পেয়ে নেতৃত্বের বিরোধ যতটুকু ছিল, সুবর্ণজয়ন্তীর কমিটি ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে। খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। শনিবার কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ঘটেছে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা।
জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য চিত্রনায়ক হেলাল খান।
অনুষ্ঠান শেষে এই দুই নেতার সামনেই মারামারিতে লিপ্ত হন বিবদমান দুই অংশের নেতা-কর্মীরা। একাংশের নেতা-কর্মীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিএনপি নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান। এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল দেখা দেয় অনুষ্ঠানস্থলে। বেবী নাজনীন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় তাকে উদ্দেশ্য করেও কটু কথা বলতে দেখা গেছে।
নেতৃত্বের কোন্দলে প্রায় এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ নয়, এই অভিযোগে কেন্দ্র থেকে আজঅবধি কোনো কমিটি দেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। পরে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব এম এ সালামের উদ্যোগে গত ১২ এপ্রিল ৫০১ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু এই কমিটি থেকে বহু নেতা-কর্মী বাদ পড়ায় সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। রোজার সময় অনুষ্ঠিত হয় পাল্টাপাল্টি ইফতার মাহফিল। সর্বশেষ জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে কমপক্ষে আটটি অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শনিবার যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুটি পৃথক অনুষ্ঠান। স্থানীয় সময় রবিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আরো দুটি অনুষ্ঠান। এছাড়া সোমবারও একাধিক অনুষ্ঠান হবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে।
শনিবার পালকি সেন্টারের অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের রবিবারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লুর এবং সদস্য সচিব মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এ অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে মৃদু বাদানুবাদ তৈরি হয়। পরে দেখা দেয় তুমুল হট্টগোল। একপর্যায়ে একাংশের নেতা আলমগীর হোসেনের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন আরেক অংশের নেতা মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান। আলমগীর হোসেন সজোরে ধাক্কা মারলে মশিউর রহমান নিচে পড়ে আহত হন। পরে অন্য নেতা-কর্মীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেবী নাজনীন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হন। ক্ষুব্ধ মশিউর রহমান একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করেও কটূক্তি করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বের বিরোধের জন্য কেন্দ্রের ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’কে দায়ী করেন।
এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেবী নাজনীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। একটি সংগঠনের ব্যাপারে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল। একাধিক অনুষ্ঠান মূলতঃ এ কারণেই হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত