শরীয়তপুরে পাট চাষীরা পাট নিয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তায়
রতন আলী মোড়ল শরিয়তপুর জেলা প্রতিনিধি: পাট জাঁক দিতে না পারায় ভালো ফলনের পরও আশাতিক ফলাফল হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এদিকে জেলা কৃষি অফিস বলছে, পাটের ভান্ডার ক্ষেত জাজিরায় হঠাৎ করে পানি বাড়ায় পরিপক্ক হওয়ার আগে কেটে ফেলতে হয় পাট গাছ।
জানা যায়, এই বছর পাটের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এই বছর ৪০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এতে করে পাট চারা লাগানোর পর ব্যাপক ক্ষরা হয়। ফলনে গার্তি কম হলেও পাটের গুনগত মানে পরিবর্তন হয়েছে।
গত বছর এই সময় বাজারে পাটের দাম তিন হাজার থেকে সারে তিন হাজার টাকা থাকলেও এই বছর সেই পাট ২ হাজার ৪ শত থেকে ২ হাজার ৮ শত টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা অঞ্চলে পানি বেশি হওয়ায় পাঠ পরিপক্ক না হতেই কেটে ফেলানো হয়েছে।
অন্যদিকে জেলার ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট, ডামুড্যা ও নড়িয়া অঞ্চলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। পাঠ কেটে মাঠে ফেলে রেখেছে অনেকে ই। আবার অনেকে বাড়ির পাশে ছোট ডোবায় পাট জাক দিচ্ছে। এতে করে যতটুকু পানির প্রয়োজন তার থেকে বেশি পরিমান পাট জগ দেওয়া হচ্ছে।
পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার পাটের গাছ ভালো হয়েছে। কিন্তু পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা ও পানি না থাকায় জাগ দিতে সমস্যা হওয়ায় পাটে লোকসান হবে। ফলন হবে ভালো পাটের এবার কিন্তু পাটের আশের মান ভলো হবে না।
পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর এই সময় তিন থেকে সারে তিন হাজার টাকা পাটের মণ ছিল। তাও মোটামোটি মানের পাট। কিন্তু এই বছর পাটের মান ভালো না ফ্রেস পাট বাজারে আসছে না। তাই দামও বেশি যাচ্ছে না। পাটের মান ভালো না হওয়ায় ঢাকার পাইকাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
জাজিরা উপজেলার পাট চাষী খালেক হাসেম মিয়া বলেন, আমাদের এখানে বন্যার কারণে পাট পরিপক্ক না হতে ই পাট কেটে ফেলা হয়। কারণ বিলে পানি জমে ছিল। এতে করে পাটের গোড়ার পচন ধরতে শুরু করেছিল। তাই দ্রুত পাট কাটা হয়। এখন সেই পাট নিয়ে পড়েছি মহা বিপাকে। পাটের মান ভালো হয় নি। তাই লোকসান গুনতে হবে বড় অংকের।
আরেক চাষি আনেয়ার হোসেন বলেন, বিশ বিগা জমিতে আমি পাট রোপন করেছি। যা খরচ করেছি তা উঠবে বলে মনে হয় না। বাজারে পাটের দাম কম। তার থেকে বড় কথা পাট কিনছে না আড়ৎদাররা। তারা বলছে পাটের মান ভালো না তাই তারা কিনছে না।
এদিকে ভেদরগঞ্জ এলাকার চাষি মোক্তার মিয়া বলেন, প্রতিবছর এই সময় বিলে থৈথৈ পানি থাকে। তখন পাট জাগ দিয়ে টেনে এনে আশ ছড়াতাম। কিন্তু এবার বিলে পানি নেই মাথায় করে পাট ছোট খালে আনতে হচ্ছে। পাট মরে যাচ্ছে, পাট অর্তিক ভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পাটের আশ শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন পুরো ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে রয়েছি এবারের পাট নিয়ে।
আরেক চাষি বাচ্চু ভূইয়া বলেন, পানি কারণে পাট রাখা যাচ্ছে না। আগা গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যচ্ছে। পাট সাধারণত লাল ও পরিষ্কার হয় কিন্তু এবার সেই পাট কালো হয়ে যাচ্ছে। পানি নাই তাই পাট এনে জাগ দেওয়াও পাচ্ছে না। মাঠে ই কেটে রাখা হচ্ছে। ভাগে ভাগে কাটা হচ্ছে পাট। পরিপক্ক হওয়ার পরও এবার মাঠ থেকে পাট আনতে পারছি না। যাও আনি তা জাগ দেই আবার সেগুলো উঠিয়ে আরোও কিছু এনে জাগ দেই।
পাট ব্যবসায়ী অনিল পাল বলেন, পাটের মান ভাল না তাই আমরা পাট কিনছি না। গতবছর এই সময় সপ্তাহের আগায় মাথায় পাচ থেকে সাত টি পাটের ট্রলার ঢাকার পাইকারের কাছে পাঠাতাম। কিন্তু এই বছর দুই টি পাঠিয়েছি তারা বলেছে ভাল পাট না হলে কিনতে না। আমরা এখন আছি বিপাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ গোলাম রসূল বলেন, ক্ষরার কারণে এই বছর কিছু টা সময় দেরি করে পাট লাগানো হয়েছে। তাও কৃষকদের নিজেশ্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিয়ে পাটের চারা লাগানো হয়। এরপরও তারা ভালো করছিল। কিন্তু সর্বশেষ জুন মাসের বণ্যার করণে নিচু অঞ্চলের পাট পরিপক্ক হওয়ার আগে ই কেটে ফেলতে হয়েছিল। এদিকে গত বছরের তুলনায় এই বছর ৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এটির কারণে উচু অঞ্চলে পাট জাগ দিতে পারে নি। তারা পাট কেটে পরিবহন করে পাট অন্য জায়গায় নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে তাই খরচের পরিমান বেশি হয়ে যাচ্ছে। এদিকে পাটের ফলনে তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও পাটের আশের গুন গত মান কম হওয়া বাজারে দাম কম পাবে। সব মিলিয়ে এই বছর আবাদ ভালো হলেও ফলনের দিক দিয়ে কিছুটা গাতি হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত