জ্বালানির দাম কমলেও কমেনি বাসভাড়া
কয়েক দিন আগেও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে রামপুরা পর্যন্ত বাসের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে এই পথের ভাড়া পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। এখন ডিজেলের দাম পাঁচ টাকা কমেছে। কিন্তু বাসের ভাড়া কমছে না, ২৫ টাকাই রয়ে গেছে।
গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম বাড়ার এক দিনের মাথায় বৈঠক করে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩৫ পয়সা ও আন্ত জেলায় ৪০ পয়সা বাড়িয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ডিজেলের দাম কমার পর নতুন ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে কোনো রা নেই বাস মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের।
একই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালে। তখন জ্বালানি তেলের দাম লিটারে কমেছিল তিন টাকা। এর বিপরীতে বাসে প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমিয়ে ছিল বিআরটিএ। কিন্তু তাতে বাসভাড়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি। কাগজে-কলমে ভাড়া কমলেও যাত্রীদের কাছ থেকে আগের ভাড়াই আদায় করা হয়েছিল তখন।
২০১১ সাল থেকে গত ১২ বছরে বাসের ভাড়া বেড়েছে ছয়বার। এর মধ্যে ২০১৬ সালেই ব্যতিক্রমীভাবে ভাড়া কমেছে তিন পয়সা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার শুধু বাসের ভাড়া বাড়ানোর সক্ষমতা রাখে। ভাড়া কমলে সরকার সেটা কার্যকর করতে পারে না। বাস মালিকদের সঙ্গেই সরকার সমঝোতা করে, যাত্রীর পাশে থাকে না। এখন ধাপে ধাপে জ্বালানির দাম কমানো হলে এর সুফল পাবেন বাস মালিকরা। সাধারণ জনগণের কোনো উপকার হবে না।
বর্তমানে দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ২.২০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে প্রতি কিলোমিটারে ২.৫০ টাকা এবং মিনিবাসে ২.৪০ টাকা করে যাত্রীদের ভাড়া দিতে হচ্ছে। আগে ভাড়া ছিল দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটারপ্রতি ১.৮০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে ২.১৫ টাকা, মিনিবাসে ২.১০ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা, মিনিবাসে আট টাকা। তা এখনো বলবৎ আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—এবার ভাড়া কত কমবে? এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল মঙ্গলবার বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সদস্য বিআরটিএর পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাসও ফোন ধরেননি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য বলছে, বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা কমানো হতে পারে। শিগগিরই এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে এর জন্য বাস মালিকদের সঙ্গে বিআরটিএর আনুষ্ঠানিক বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়ায় ১৬ শতাংশ ভাড়া বেড়েছিল। সেই হিসাবে তেলের দাম পাঁচ টাকা কমায় ভাড়া আড়াই শতাংশ কমানো উচিত। তা আড়াই টাকার ভাড়া ২.৪২ টাকায় নেমে আসার কথা। অর্থাৎ আট পয়সা কমা উচিত।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সমিতির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে মালিকরা আগ্রহী থাকবে, কমানোর সময় একই রকম তৎপরতা থাকবে না—এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু বাসের ভাড়া কমিয়ে সমন্বয় করতে হবে তাই এই উদ্যোগ বিআরটিএকেই নিতে হবে। তারা ডাকলে নিশ্চয়ই যাব, কথা বলব। ’
গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মহাখালী, বংশাল, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এখনো আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাড়তি ভাড়ার চেয়ে বেশিও আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা বাড়লেও বাস্তবে বাসে ভাড়া বেড়েছে ৫, ১০, ১৫, ২০ টাকা—এভাবে।
এমন পরিস্থিতিতে কিলোমিটারপ্রতি পাঁচ পয়সা ভাড়া কমালে এর কোনো সুফল যাত্রীরা পাবেন না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ঘটনা নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে। তখন তিন পয়সা ভাড়া কমানো হলেও যাত্রীদের কোনো লাভ হয়নি। এখনো কোনো লাভ হবে না। ’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আগামীকাল (আজ) বিকেলে বিআরটিএ কার্যালয়ে বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে ভাড়া কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ভাড়া কত কমছে, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। সব পক্ষ বসে আলোচনা করেই নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত