কানাডায় ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ থেকেই ট্রাক চালিয়ে হত্যা: পুলিশ
কানাডায় ‘পূর্ব-পরিকল্পিত’ হামলায় পকিস্তানী বংশোদ্ভুত এক মুসলিম পরিবারের চার সদস্যের ওপর ট্রাক চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে চারজনকেই। পুলিশ বলছে: ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ থেকেই এই হামলা করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ বছর বয়সী নাথানিয়েল ভেলটম্যান রোববার ৯ থেকে ৭৪ বছর বয়সী একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের ওপর ট্রাক হামলা চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া লন্ডন শহরের বাসিন্দা ভেলটম্যানের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও একজনকে হত্যার চেষ্টার মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল তাকে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হতে পারে।
নিহতরা হলেন, সৈয়দ আফজাল (৪৬), তার স্ত্রী মাদিহা সালমান (৪৪) এবং তাদের ১৫ বছরের কন্যা ইয়ুনাহ আফজাল। এছাড়াও মারা গিয়েছেন সৈয়দ আফজালের ৭৪ বছর বয়সী মা, যার নাম নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভাগ্যক্রমে সৈয়দ আফজালের নয় বছরের ছেলে ফায়েজ আফজাল বেঁচে গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট পল ওয়েট বলেছেন, মুসলিম হওয়ার কারণে এসব মানুষের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে ধারণা। পুলিশ এতে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগও খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত হামলাকারীর নাম নাথানিয়াল ভেল্টম্যান। অন্টারিও’র লন্ডন শহরের বাসিন্দা এই তরুণের বয়স ২০ বছর। হামলার পর সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের একটি বিপণিবিতান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত নাথানিয়াল ভেল্টম্যানের আগের কোনো ক্রিমিন্যাল রেকর্ড নেই। এছাড়াও তিনি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ট্রাক চালিয়ে ওই পরিবারটির সবাইকে হত্যা করতে চেয়েছিল খুনি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে একমাত্র সদস্য হিসেবে ৯ বছরের একটি শিশু বেঁচে গেছে।
পুলিশ জানায়, নিহতের পরিবারটি প্রায় ১৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে কানাডায় এসে বসবাস শুরু করেছিল।
২০১৭ সালে কুইবেক শহরের মসজিদে ৬ জনকে হত্যার পর কানাডার মুসলিমদের ওপর এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
যা বলছে প্রত্যক্ষদর্শী
প্রত্যক্ষদর্শী পাইগ মার্টিন সাংবাদিকদের বলেন, নাথানিয়াল একটা কালো ট্রাকে ছিল। রোববার কানাডার আবহাওয়া ছিল চমৎকার। এর মাঝেই স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে হাইড পার্ক রোডের এ মুসলিম পরিবারের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই ট্রাক একটি লাল আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল যাতে দেখতে অসুবিধা হয়। আমি তখন পার্কে হাঁটছিলাম। এরপর বিশৃঙ্খলা শুনে সামনে এসে বীভৎসতা দেখি।
আমি মর্মাহত, আপনাদের পাশে আছি: ট্রুডো
এক টুইট বার্তায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লিখেছেন, অন্টারিও’র ঘটনায় আমি মর্মাহত। গতকালের ঘৃণ্য ঘটনায় যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা পাশে আছি হাসপাতালে থাকা শিশুটিরও।
হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্টারিও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডগ ফোর্ড টুইটারে লিখেছেন, ঘৃণা ও ‘ইসলাম বিদ্বেষে’র কোনও স্থান নেই অন্টারিওতে।
লন্ডন প্রদেশেরে শহরের মেয়র এড হোল্ডার এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনাকে লন্ডনবাসী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বলে উল্লেখ করেন। এর শেকড়ে রয়েছে গভীর বিদ্বেষ।
এ ঘটনায় লন্ডন সিটি হলের বাইরে পতাকা অর্ধনমিত রেখে তিন দিন শোক পালন করা হবে বলেও জানান শহরের মেয়র।
পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি পশ্চিমা দেশগুলিতে ‘ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিদ্বেষের’ ইঙ্গিত দিচ্ছে।
টুইটে তিনি বলেন, পশ্চিমারা কেন মুসলিম বিদ্বেষী হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদাযয়ের সর্বজনীনভাবে লড়াই করা দরকার।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত