বগুড়ার ধুনটে কৃষি কর্মকর্তার অনিয়ম দুর্নীতিতে চাষীদের ভাগ্যে জোটেনি কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার

| আপডেট :  ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১৯  | প্রকাশিত :  ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১৯

সুমন হোসেন, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনটে কৃষি অফিসারের বিরুদ্ধে কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণের নিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর পরিবর্তে কৃষক নন এমন ব্যক্তিদের নামের তালিকা করে বীজ ও সার বিতরন করা হয়েছে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে বেচাকেনা। এতে খাদ্যশস্য সহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির সরকারী উদ্দ্যেগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়, চলতি রবি মৌসুমে খাদ্য শস্যসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি প্রনোদনা কর্মসুচির আওতায় ধুনট উপজেলার ১২ হাজার ১২০জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর জন্য বিনামুল্যে উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধান, গম, ভুট্রা, সরিষা, মুগ , মুসুর, সূর্যমুখি ও শীতকালীন পেঁয়াজের বীজ ও রাসায়নিক সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৪ হাজার ৩শত জন কৃষকের জন্য ২ কেজি হাইব্রিড ধানের বীজ, ৩হাজার ৫০০ কৃষকের জন্য উফশী জাতের ধানের ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ১০ কেজি এমপি মার, এক হাজার ২০০ জন চাষীর জন প্রতি ১ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি গম বীজ, ১০কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার। ২ হাজার ৪০০জন চাষীর ১ কেজি সরিষার বীজ , ১০ কেজি ডিএপি ১০ কেজি এমওপি সার। ৬০০ জন কৃষক ২কেজি ভুট্রা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ১০কেজি এমওপি সার। ৫০ জন কৃষক ৫ কেজি মুগডাল বীজ ১০ কেজি ডিএপি ৫ কেজি এমওপি সার । ২০ জন কৃষক ৫ কেজি মুসুর ডালবীজ ১০ কেজি ডিএপি ৫ কেজি এমওপি সার। ৪০ জন কৃষক ১ কেজি শীতকালীন পেঁয়াজ বীজ ১০ কেজি ডিএপি ১০ কেজি এমওপি সার এবং ১০জন কৃষককে ১ কেজি সুর্যমুখী বীজ ১০ কেজি ডিএপি ১০ কেজি এমও পি সারের জন্য নামের তালিকা উপজেলা কৃষি অফিস তৈরী করেন। ওই তালিকায় উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর পরিবর্তে কৃষক নন এমন ব্যক্তিদেরকে কৃষি প্রনোদনার বীজ ও সার বিতরন করা হচ্ছে। গেল এক সপ্তাহ থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জানের কার্যালয় থেকে গম, সরিষার ও ভুট্রার বীজ এবং রাসায়নিক সার বিতরন করা হচ্ছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে যাদের নামে গম, ভুট্রা ও সরিষার বীজ সহ সার বিতরন করা হয়েছে তারা অনেকেই পাননি। উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি দিদার পাড়া, গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী শাহানা খাতুন, একই গ্রামের দুলাল উদ্দিনের স্ত্রী হাওয়া খাতুন, ভুট্রো মিয়ার স্ত্রী মায়েদা খাতুন , ও সোলায়মান আলীর স্ত্রী মিনি খাতুন জানান, তাদের নামে গামবীজ ও সার বরাদ্দ করা হয়। বীজ সার নেওয়ার জন্য স্থানীয় কৃষি অফিসে গেলে তাদের বিতরনের তালিকায় টিপ সহি নিয়ে গম বীজ ও সার না দিয়ে ফিরে দেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের প্রবীন কৃষক আবুল হোসেন জানান, এলাঙ্গী ইউনিয়নের প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে গম চাষের জন্য সরকার বিনা মুল্যে বীজ ও সার দিয়েছেন । অথচ আমাদের ইউনিয়নে গম চাষের জন্য ১০০ বিঘা জমি নেই।

এ বিষয়ে এলাঙ্গী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, যারা বীজ ও সার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন, তারা নিজেরাই উত্তোলন করে কালো বাজারে বিক্রি করেছেন।

ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, আবাদী জমির ৭৫ ভাগই যমুনা নদীর পেটে। আমাদের ইউনিয়নে কৃষি প্রনোদনার ধান, গম, ভুট্রাসহ অন্যান্য ফসলের বীজ ও সার যে পরিমান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, চাষের জন্য ওই পরিমান জমি খুজে পাওয় যাবে না।

ধুনট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, কৃষি প্রনোদনার বীজ ও সারের জন্য তালিকা কৃষি অফিস করেছেন, তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন। কারা বীজ সার পেয়েছে তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। একই কথা জানিয়েছেন মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ ও চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসানুল করিম।

কালেরপাড়া ইউনিয়নের মোজাফ্ফর ও সুলতান মিয়া জানান, ২০ কেজি ২০ কেজি গম বীজ ২০কেজি সার বরাদ্দ পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। চিকাশী ইউনিয়নের চাষী গোলাপ মন্ডল বলেন, তার ইউনিয়নে গম চাষের কোন জমি নাই।

বীজ ও সার কিনতে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল, আয়নাল জানান, আমারা টাকা দিয়ে কৃষি প্রনাদনার বীজ ও সার ক্রয় করছিল এটা তেমন দোষের কিছু নয়, তবে যারা প্রান্তিক চাষীদের পরিবর্তে ভুয়া কৃষকের নামের তালিকা করেছে তারাই বীজ ওসার বিক্রি করছেন।

একটি গোপন সুত্রে জানায়, কৃষি অফিসার আসাদুজ্জামান নিজেই এসব ব্যবশায়ীদের কিনে নেওয়া কৃষি প্রনোদনা ৩০০ কেজি সরিষা ও ৭শ ব্যাগ গম বীজ কৃষি প্রদর্শনীর জন্য কৃষি অফিসার আসাদুজ্জান নিজেই ক্রয় করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার আসাদুজ্জান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দোষারোপ করে বলেন , কৃষি প্রনোদনার তালিকা করতে কিছু ভুল ক্রটি থাকাতে পরে। এজন্য রিপোর্ট না করার অনুরোধ করেছেন এবং এ প্রতিবেদককে একটি সরিষা ও একটি গমের স্লীপ দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। ধুনট উপজেলায় গম চাষের জন্য ১হাজার ২০০ বিঘা ও সরিষা চাষের জন্য ২ হাজার ৪০০ বিঘা ভুট্রা চাষের জন্য কাঙ্কিত জমিই পাওয়া যাবে না। কাগজ কলমে লক্ষ্যমাত্রা দেখানো হলেও মাঠের অনুসন্ধানের চিত্র উল্টো।

কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রাহেলা পারভীনের সাথে মোবাইল ফেনে যোগযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকার অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত