মানুষ পশুপাখিরেও খাওন দেয় আমগোরে দেয় না
রাজধানীর সদরঘাটের ফুটপাতই আল আমিনের ঘর। বাবা-মা কে তা জানে না সে। শুধু জানে তার বাড়ি ভোলা জেলায়। ছোটবেলা থেকেই সদরঘাটে বেড়ে ওঠা। বয়স আনুমানিক ১৫। প্রতিদিন ভাত জোটানোই যেন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আল আমিন বলে, কতো রাইত, দিন যে পানি খাইয়া ঘুমাইছি তার হিসাব নাই।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেখা গেলো আল আমিন ময়লা থেকে প্লাস্টিক, বোতল তুলছে। এসব সে বিক্রি করবে। দিনে তার আয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ভোরবেলা বস্তার ওপর ঘুমায়।
আল আমিন বলে, ভাত রাইন্দা খাইলে খরচ কম হতো। কিন্তু কোন বুদ্ধি নাই রান্দোনের। দুপুরে আর রাইতে ভাত খাইতেই সব ট্যাকা শ্যাষ হইয়া যায়। আমার বাপ মায়ের চেহারা মনে নাই। খালি মনে আছে বাপের লগে লঞ্চে কইরা সদরঘাটে আইচিলাম। আর কিচ্চু মনে নাই। খালি নামটাই। এক চাচায় প্রথম দিকে কাছে কাছে রাখতো। হেই চাচার লগে একদিন ঘুমাই। সকালে উইট্টা দেখি চাচাও সাথে নাই। পরে তারে আর পাই নাই।
আল আমিন একা নয়। তারা পাঁচ থেকে সাতজন এক সাথে থাকে। সারারাত প্লাস্টিক কুড়ায়। তাদের কারো সাথেই বাবা-মায়ের যোগাযোগ নাই। আল আমিনের এরাই সব। জানতে চাইলে আল আমিন বলে, করোনার সময়ের কথা। রাইতের লঞ্চে এক যাত্রীর কাছে খাবার চাইছিলাম। সারাদিন আছিলাম না খায়া। তবুও খাবার দেয় নাই। খিদার জ্বালায় হাত থাইক্যা কাইড়া নিয়া দৌড় দেই। ব্যাটারা আমারে এমন মাইর দিছে মুখ দিয়া রক্ত বাইর হইছে। তারপর তারা কয়, আমি নাকি মানিব্যাগ নিয়া দৌড় দিছি। আমার সারা শরীর খুইজাও মানিব্যাগ পায় নাই। সদরঘাটের গার্ডরা মানিব্যাগের লাইগা বাইন্দা পিটাইছে। আমি দিমু কই থাইক্যা, আমিতো খালি খাবারের একটা পলিথিন লইয়া দৌড় দেই। মানুষ পশুপাখিরেও খাওন দেয় আমগোরে দেয় না।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত