পটুয়াখালী ১ আসন, ভাবনায় দুই দল, আলোচনায় জাপা

| আপডেট :  ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০১  | প্রকাশিত :  ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০১

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নড়াচড়া। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি) আসন নিয়ে বেশ ভাবনায় থাকতে হয় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে। এ আসন থেকে কে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে চলে জল্পনা। আগামী নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের ৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে মাঠে দেখা নেই বিএনপির। এবারও বড় দলের মাথায় লবণ রেখে বরই খাওয়ার সুযোগ খুঁজছে জাতীয় পার্টি।

স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত পাঁচবার আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এ আসন—১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে। বিএনপির দখলে ছিল ১৯৯১ ও ২০০১ সালে। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ ও ২০১৪ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এই পরিসংখ্যান বলছে, কোনো দলই পটুয়াখালী-১ আসনে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু হোক বা না হোক, এবারও এ আসন নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারছে না আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি।

দল সাজাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এর অন্যতম কারণ ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন পেতে তৎপরতা। এ কারণে দলে দেখা দিয়েছে কোন্দল। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও দলে একতার অভাব। তবে পটুয়াখালী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়াই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে। আলোচনায় তাঁর ছেলে তারিকুজ্জামান মনি, আফজাল হোসেন, সুলতান আহমেদ মৃধা, ডা. শফিকুল ইসলাম। বিএনপি এগিয়ে যেতে পারে হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সামনে রেখে। এ ছাড়া মনোনয়ন পেতে তৎপর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি এবং সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সদস্য মোশতাক আহমেদ পিনু। জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদারের নজরও এবার পটুয়াখালী-১ আসনে।

নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠ চাঙা করে তুলছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে শাহজাহান মিয়াই এগিয়ে। ২৫ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে বর্তমানে দিবসকেন্দ্রিক ও দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি তেমন নেই। এ জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরই দায়ী করছেন তিনি। বয়স বিবেচনায় তাঁর ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি পেতে পারেন মনোনয়ন। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন এই পরিবার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। শাহজাহান মিয়া সততা ও দক্ষতার সঙ্গে এমপির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে এবারও এ পরিবারেই থাকবে মনোনয়ন।

কিন্তু গত পাঁচ বছরে শাহজাহান মিয়া দলীয় প্রোগ্রামে নেই কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তারিকুজ্জামান মনি বলেন, ‘দলীয় প্রোগ্রামে তাঁকে দাওয়াত দেওয়া হয় না বিধায় তিনি জানেনও না, যেতেও পারেন না।’

পিতা-পুত্রের সব হিসাব ধূলিসাৎ করে দিতে পারেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। এরই মধ্যে এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। শহরের পিডিএস মাঠ এলাকায় বাড়ি, সেখান থেকে সহজেই পটুয়াখালীতে এসে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন, তাঁর পক্ষে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করছেন। তবে রাজনীতির মাঠে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তাঁর। জেলার রাজনীতির সঙ্গেও ছিল না তেমন সম্পর্ক। এরপরও বেশ আশাবাদী এ নেতা। আফজাল হোসেন বলেন, ‘ইলেকশনের জন্যই মাঠে কাজ করছি। মনোনয়ন চাইব, মনোনয়ন না পেলে প্রধানমন্ত্রী যাকে দেবে তার পক্ষে কাজ করব।’

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা এবং পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ মৃধা। মৃধা পরিবার থেকে গত দুই আওয়ামী লীগ টার্মে আধিপত্য ছিল শহরজুড়ে। সুলতান আহমেদ মৃধার স্ত্রী লুৎফুন নেছা ২০১৪ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হন এবং তাঁর শ্যালক ডা. শফিকুল ইসলাম ছিলেন পৌরসভার মেয়র, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ডা. শফিকুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

মনোনয়ন পেতে তৎপর বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী কানিজ সুলতানা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মোহন, দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আশরাফ প্রমুখ।

ভোটের মাঠে দেখা যায় বাস্তব চিত্র। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যে দূরত্ব, তা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, আর্থিকসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টাকার খেলায় এই দলের একাধিক নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণ সংসদ নির্বাচনে সার্বিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে আপাতত ভাবছে না বিএনপি। এরপরও নির্বাচনে গেলে দলের ভাবনা কী, তা জানতে চাইলে মনোনয়নপ্রত্যাশী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত বেঁচে থাকার গ্যারান্টি নেই, গ্যারান্টি নেই মনোনয়ন চাওয়ারও।’ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘দলের জন্য রাজনীতি করি, দলের দুর্দিনে পাশে ছিলাম এবং আছি। জেলা বিএনপির বিগত দিনের দুর্দশা থেকে ফিরিয়ে এনেছি। অবশ্যই দল নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইব।’

এ আসনের সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন বড় একটি নাম জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার। পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক কিংবা ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির কোনো অবস্থা না থাকলেও আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কাঁধে উঠে এবারও ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা চালাতে পারেন তিনি। ২০১৪ সালে জোটের কারণে দলীয় মহাসচিব হিসেবে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রুহুল আমিন হাওলাদার। সেই সময় জেলাজুড়ে স্লোগান ছিল—‘এ আসনে নৌকা নাই, লাঙল হলো নৌকার ভাই’। এই স্লোগান দিয়ে সে সময় নির্বাচনী বৈতরণি পার করেছিলেন রুহুল। তবে এবার তেমনটি না-ও ঘটতে পারে।

যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হয়, তাহলে এ আসনে আবারও হানা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জাপার রুহুলের। পাশাপাশি বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে যোগ দিলেও রুহুল আমিন হাওলাদার চেষ্টা করবেন আসনটিতে নির্বাচন করতে। এর কারণ, রুহুল আমিন হাওলাদারের নির্দিষ্ট কোনো আসন নেই। স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনার বরিশাল-৪-এর (বাকেরগঞ্জ) নির্দিষ্ট আসন রয়েছে। কিন্তু রুহুল আমিন হাওলাদারের নিজস্ব কোনো বলয়, অবস্থান ও কিংবা নেতা-কর্মী কিছুই নেই। এ কারণে পটুয়াখালী-১ আসনেই তাঁর নজর।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত