সৌদি গিয়ে ‘নির্যাতনের শিকার’ নারী ফিরলেন সন্তান কোলে

| আপডেট :  ০৯ জুন ২০২১, ১২:১৭  | প্রকাশিত :  ০৯ জুন ২০২১, ১২:১৭

ধরি নাম তার জুঁই। ৩২ বছর বয়সী এ নারীর বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়। পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় গৃহকর্মীর চাকরি নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সৌদি আরবে যান তিনি। ৯ মাসের কারাবাস শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন ছয় মাসের ছেলেসন্তান নিয়ে। মায়ের কোলে হাসিখুশি শিশুটি পিতৃপরিচয়হীন। তাই বিষন্ন মা। সমাজ-পরিবার গ্রহণ করবে না- এ ভয়ে জুঁই বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কোথায় যাবেন তাও জানেন না।

জুঁইয়ের দাবি, তিনি সৌদিতে যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেই গৃহকর্তা তার সন্তানে পিতা। সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গৃহকর্তা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত সফর জেলে যান। কারাগারে তার ছেলের জন্ম হয়। সামাজিক মর্যাদাহানির আশঙ্কায় শিশুটির নাম ও ছবি প্রকাশ করছে না। তার পরিবারের কাছে সন্তান জন্মদানের খবর গোপন রাখায়, তারা বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

জুঁই বলেছেন, সৌদিতে চাকরি করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে সন্তান জন্মদানের কথা তার পরিবার জানে না। ছেলেকে নিয়ে তার পক্ষে পরিবারে ফেরা সম্ভব নয়। সমাজ তাকে ও তার সন্তানকে গ্রহণ করবে না। তাই দেশে ফিরে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে বিস্তারিত জানিয়ে সহায়তা চান জুঁই।

পুলিশ তাকে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। জুঁই বর্তমানে ব্র্যাকের আশ্রয়ে রয়েছে। তাকে কোন রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশ পাঠিয়েছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। পাসপোর্ট নম্বর সার্চ করে পাওয়া গেছে, তাকে আলবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (লাইসেন্স নম্বর ৩৭৫) নামের একটি এজেন্সি পাঠিয়েছে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জাকারিয়া বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠান জুঁইকে পাঠায়নি। কোনো কারণে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সে। বিষয়টি জানার পর তিনি অসুন্ধান করে পেয়েছেন, জুঁইয়ের ভিসা প্রসেস ও তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল ন্যাচারাল ইস্টার্ন ওভারসিজ (লাইসেন্স নম্বর ১৯৯১) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ন্যাচারাল ইস্টার্নের ব্যবস্থাপনার পরিচালক তাহেরুল ইসলাম পাটোয়ারির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তাকে ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি তিনি। জুঁইকে কে বিদেশ পাঠিয়েছে তা নিয়ে এজেন্সি দায় স্বীকার না করলেও আইনানুযায়ী দায়িত্ব তাদের।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের ২২ (১) ধারা অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী ও নিয়োগকারীর মধ্যে চুক্তি করিয়ে দেয়। এজেন্সিই নিয়োগকারীর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হবে। কর্মীকে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্বও এজেন্সির।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশে চাকির করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে সন্তান নিয়ে ফেরার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সন্তানের বাবা কে তা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা উচিত।

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বিএনএসকে’র নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেছেন, সরকার ও দূতাবাস উদ্যোগী হয়ে আইনি ব্যবস্থা নিলে অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে নির্যাতনের শিকার নারীরা। সম্প্রতি আমরা দেখেছি আবিরুন বেগম নামের এক বাংলাদেশি গৃহকর্মীকে হত্যার দায়ে সৌদির গৃহকর্তা এবং তার স্ত্রী-ছেলের কারাদণ্ড হয়েছে।

দেশের জন্য রেমিট্যান্স অর্জনে বিদেশে চাকরি করতে গিয়ে নারী কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়া ও অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের বিষয়ে ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শ্রমশিশুর কান্না শুনতে কি পান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, শুধু ২০১৮ সালেই ১৭ অন্তঃসত্ত্বা নারী দেশে ফেরেন। তাদের সবারই অভিযোগ ছিল, কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকারে তারা গর্ভধারণ করেছেন।

ব্র্যাক বলছে, সম্প্রতি এমন ১২ নারী ফিরেছেন। গত ২৬ মার্চ সৌদি থেকে সন্তান নিয়ে ফেরেন নরসিংদীর বেলাবোর এক তরুণী। গত ২ এপ্রিল এক নারী বিদেশ থেকে ফিরে আট মাসের সন্তানকে বিমান বন্দরে ফেলে যেতে বাধ্য হন।সূত্র: সমকাল।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত