সোনারগাঁওয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভটিজিংকারীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

| আপডেট :  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৩  | প্রকাশিত :  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৩

আল আমিন কবির, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁয়ে মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের হরিদাস গৌর গোবিন্দ শ্যামসুন্দর স্মৃতি বিদ্যায়তন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বখাটে ইভটিজিং কারীদের দৌরাত্ম্য অসহায় হয়ে পরেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সকুল পড়ুয়া কিশোরী বা তরুণীদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে পথে-ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে এক শ্রেণির বখাটে ছেলে মেয়েদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন রকম অশালীন মন্তব্য করে। কখনো কখনো এটি কেবল মানসিক নয়, শারীরিক নির্যাতনেও রূপ নেয়।

সোমবার (২৭ ফেব্রয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা ইভ টিজিংকারীদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার ভারাটে ও স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বখাটের সংখ্যাই বেশি। তবে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও এখন ইভ টিজিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল প্রতিষ্ঠানের পিছনের রাস্তায় দল বেধে দারিয়ে থাকতে ও দেখা যায় বখাটে ইভটিজারদের

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার পথে এবং ছুটির পর বাসায় যাওয়ার পথে তরুণীদের উত্যক্ত করে। শুধু উত্যক্ত করাই শেষ কথা নয়, কখনো তারা শরীরে পর্যন্ত হাত তোলে। এটি কখনো কখনো এমন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় যে, কোনো কোনো মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। ঠিক এমনটিই অভিযোগ করেন স্থানীয়রা

সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ছুটির আগে ও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন রাস্তায় বখাটে ইভটিজারদের দৌরাত্ম্যর প্রতিবাদ করলে সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদ কারীর উপর হামলা চালানোর ও অভিযোগ করেন,

অশালীন উক্তির মধ্যেই এখন আর ইভ টিজিং সীমাবদ্ধ নয়। অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন, চিঠি, ই-মেইল, কার্টুন, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল, নোটিশ বোর্ড, টেলিফোন, এসএমএস, পোস্টার, নোটিশ, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে এখন চলছে ইভটিজিং। এর মাধ্যমে অনেকে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। আর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে মেয়েরা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ইভ টিজিং বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। সন্ত্রাসীদের উৎপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন মেয়ে আত্মহত্যা করার পর সব শ্রেণীর মানুষের কাছে এখন ইভ টিজিং খুব পরিচিত একটি শব্দ। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইভ টিজিং প্রতিরোধে এখন চলছে জোর আলোচনা। গ্রহণ করা হচ্ছে নানা উদ্যোগ। এর প্রতিরোধে বখাটেদের আটক করতে কাজ শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের উদ্যোগে চলছে ইভ টিজিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়ে সচেতনতা।

ইভ টিজিং নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সম্প্রতি পুলিশের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি ইভ টিজিং দমনে পুলিশকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনাও স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন রোধ করতে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। এছাড়া দেশের কিছু স্কুল ও কলেজের জন্য একজন করে পুলিশকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবে। এদিকে ইভ টিজিং রোধে সব জেলা প্রশাসনকে তৎপর থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এবিষয়ে মোগড়াপাড়া হরিদাস গৌর গোবিন্দ শ্যামসুন্দর স্মৃতি সরকারী বিদ্যায়তন সকুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবির বলেন,

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাথে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি মেয়ে যখন ইভটিজিংয়ের শিকার হয়, তখন তার পাশে পরিবারের সহায়ক ভূমিকা না থাকলেই অনেক সময় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ইভ টিজিং এর শিকার তরুণীকেও যতটুকু সম্ভব বখাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি আমরা প্রায় সময়ে নজরদারি করলেও ইভটিজিং কারীরা আমাদের কোন তোয়াক্কা করে না বলে জানান।
কয়েকদফা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান,ইভটিজারদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অ্যাকশন ও করিয়েছেন বলে জানান, এবিষয়ে মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু বলেন, ইভটিজিং সমাজে একটি মারাত্মক ব্যাধী বরাবরের মত আমি সব সময় ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, ইভটিজিং কারীদের বিরুদ্ধে সবসময় কাজ করে চলেছি এর জন্য জনসচেতনতা ও প্রশাসনের সহযোগিতা চান এবিষয়ে রাষ্ট্র কি বলে-রাষ্ট্রীয় আইনে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১০ ধারাতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৩ সালের সংশোধনীতে বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩-এ পূর্বোলেখিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১০ ধারার পরিবর্তে নিম্নরূপ ১০ ধারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিস্থাপিত ১০ ধারা

যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশে তাহার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন তিন বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডে ও দন্ডনীয় হইবেন।

দন্ডবিধির ৫০৯ ধারা

*যে ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করিবার অভিপ্রায়ে এই উদ্দেশ্যে কোনো মন্তব্য করে, কোনো শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে যে উক্ত নারী অনুরূপ মন্তব্য বা শব্দ শুনিতে পায় অথবা অনুরূপ অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু দেখিতে পায়, কিংবা উক্ত নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশ করে, সেই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদন্ডে যাহার মেয়াদ এক বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদন্ডে বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হইবে।

এবিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান সকুল প্রতিষ্ঠান সহ যেখানেই ইভটিজিং এর মত সংবাদ পাওয়া যাবে সেখানেই আমরা দ্রুত তম সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি, এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার করবো।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত