করোনার মধ্যেও অভিবাসীদের সেবা দিচ্ছে সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস

| আপডেট :  ১১ জুন ২০২১, ০২:১৭  | প্রকাশিত :  ১১ জুন ২০২১, ০২:১৭

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে করোনা মহামারীর মধ্যেও সৌদি সরকার নির্দেশিত সকল বিধি নিষেধ মেনে প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে সাতশত বাংলাদেশি অভিবাসীকে নিয়মিত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার) অভিবাসীদের সকল সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

সেবা গ্রহণ করতে আসা অভিবাসীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দূতাবাসে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূতাবাসে সেবা গ্রহণ করতে আসা প্রবাসীদের জন্য প্রবেশের সময় টোকেন প্রদান, বসার জন্য চেয়ার, পানির ব্যবস্থা, ফ্যান, ও প্রয়োজনীয় স্ন্যাক্স ক্রয়ের লক্ষ্যে একটি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেবা প্রার্থীদের দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু চত্বরে ছাউনির নিচে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

কনস্যুলার সেবা প্রদানকালে যেসকল প্রবাসীরা নানা সমস্যার কারণে দেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন তাদের ট্র্যাভেল পারমিট প্রদান করা হচ্ছে। দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের পক্ষ থেকে স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রামের আওতায় হূরুব প্রাপ্ত, ইকামা বিহীন ও এক্সিট ভিসায় মেয়াদ উত্তীর্ণ অভিবাসীদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া অভিবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের নিবন্ধন করা হয়। অভিবাসী শ্রমিকদের মালিক পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন আদায়, কর্ম জীবন শেষে সার্ভিস বেনিফিট আদায় করার জন্য সকল সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

কোন প্রবাসী মারা গেলে তার বকেয়া আদায়, মৃতদেহ দেশে প্রেরণসহ সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবাও অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দূতাবাসের সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাউন্ট খোলা ও ওয়েজ আর্নার্স বন্ড করার সেবা প্রদান করা হয়। প্রবাসীদের বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। সেবা গ্রহণ করতে আসা অভিবাসীদের জন্য দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নার উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যেখানে জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ বিভিন্ন বই সর্বসাধারণের পাঠের জন্য রাখা হয়েছে।

সৌদি আরবে যে সকল বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তাদের আশ্রয়ের জন্য দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একটি সেইফ হাউজ পরিচালিত হচ্ছে। নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসে আশ্রয়ের জন্য আসলে তাদের সেইফ হাউজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের থাকা খাওয়া ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া নারী গৃহকর্মীদের আইনগত সহায়তা প্রদান শেষে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোন প্রবাসী বাংলাদেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সেবা গ্রহণ করতে আসা অভিবাসীদের সঙ্গে ভালো আচরণের মাধ্যমে সবাইকে সুন্দরভাবে সেবা প্রদান করতে হবে। কারো সঙ্গে কোন অবস্থায়ই খারাপ আচরণ করা যাবে না। অভিবাসীদের যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস পাশে রয়েছে।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কয়েক লক্ষ বাংলাদেশি বসবাস করছে, এখানে প্রবাসীরা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রমঘন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এসকল প্রবাসীদের সেবা প্রদানের জন্য দূতাবাসের পাশাপাশি কয়েকটি প্রবাসী সেবা কেন্দ্র কাজ করছে। এ সকল সেবা কেন্দ্র থেকে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাসপোর্ট নবায়ন, রি-ইস্যুসহ বিভিন্ন জরুরী সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত ১৯টি প্রবাসী সেবা কেন্দ্র থেকেও প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার অভিবাসীকে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন জরুরী সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

একই সাথে দূতাবাসের হটলাইন নাম্বারে বিভিন্ন পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। দূতাবাসের হটলাইন নাম্বারগুলো হচ্ছে- ৮০০১০০০১২৪ (কনস্যুলার), ৮০০১০০০১২৫ (শ্রম) ও ৮০০১০০০১২৬ (পাসপোর্ট)। দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রবাসীদের নিয়মিত বিভিন্ন জরুরী বিষয়ে অবহিত করা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। দূতাবাসের সেবা সম্পর্কে যেকোনো অভিযোগ জানানোর জন্য দুটি অভিযোগ জমাদান বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসের সেবা পেয়ে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে অনেক বাংলাদেশি বসবাস করে, এ সকল অভিবাসীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দূতাবাস নিয়মিত কনস্যুলার ট্যুরের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বিভিন্ন শহরে কনস্যুলার ট্যুরের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার অভিবাসী বাংলাদেশিকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সৌদি আরবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে এ পর্যন্ত যে সকল বাংলাদেশি মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে সকল অভিবাসী বাংলাদেশিকে দ্রুত করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত অভিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিনামূল্যে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা ও টিকা প্রদান করার জন্য সৌদি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত