হঠাৎ কেন এমন অবসরে সিদ্ধান্ত তামিমের?
চট্টগ্রামে আফগানিস্তান সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের তামিম ইকবাল বুধবার গভীর রাতে খবর পাঠান, আজ দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে কিছু বিষয় জানাবেন।
কী বিষয়, সেটি নিয়ে খোলাসা করে কিছুই বলেননি।
এমন রহস্যময় সংবাদ সম্মেলনের ডাকে সবাই বিস্মিত। অবশেষে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম ইকবাল।
এর আগে ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তামিম। এর পর থেকে শুধু টেস্ট আর ওয়ানডেই খেলছেন।
গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহই তামিমকে নিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবনা উসকানি দিচ্ছিল। কোমরের পুরোনো চোট ফিরে আসায় মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবারের একমাত্র টেস্টটা তিনি খেলেননি। তবে ওয়ানডে সিরিজের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন, এমন আশা ছিল। পরে তামিমকে অধিনায়ক রেখেই ঘোষণা হয় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দল।
কিন্তু গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে আবারও আলোচনায় চলে আসে তামিমের কোমরের ব্যথা। পরশু সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সে আলোচনা করেন তামিম নিজেই। বলেছেন, তিনি এখনো পুরোপুরি ফিট নন। তবে প্রথম ওয়ানডেটা খেলবেন, খেলেই বোঝার চেষ্টা করবেন তার ফিটনেস কোন পর্যায়ে আছে।
তামিমের এই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এটি তো আর পাড়া-মহল্লার ম্যাচ নয়। আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে, খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না!’
বিসিবি সভাপতি জানিয়েছিলেন, তামিমের অমন বক্তব্যে কোচও ক্ষুব্ধ। ‘তামিমকে আসলে পরিষ্কার করে জানাতে হবে সে কী চায়। কোন পর্যায়ে আছে সে’—বলেছেন নাজমুল হাসান।
এখানে উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় তামিমের চোট নিয়ে এরকম নেতিবাচক আলোচনা আগেও হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কাল ম্যাচ চলাকালে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সেও ছিল তামিমের চোট আর ফিটনেস নিয়ে নেতিবাচক আলোচনার প্রবাহ। তামিম নিজেকে পুরোপুরি ফিট নন বলার পর প্রথম ওয়ানডের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও কাল কোনো সমস্যা ছাড়াই প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছেন তামিম।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বারবার তামিমের ফিটনেস নিয়ে আলোচনায় কিছুটা বিরক্ত বিসিবির একটা অংশ মনে করছে, বিশ্বকাপ সামনে রেখে অধিনায়কের এরকম অস্থিতিশীল অবস্থা দলের জন্য ভালো না–ও হতে পারে। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আছে এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ। এরকম পরিস্থিতিতে তামিমকে আর ওয়ানডে অধিনায়ক রাখা যায় কি না, তা নিয়ে দুই রকম আলোচনাই ছিল বোর্ডে।
এমন দোলাচলের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম। মূলত তিনি মনে করেছেন, এতোদিন দলকে সার্ভিস দেওয়ার পরও তার প্রতি ক্রিকেট বোর্ড সঠিক আচরণ করছে না। তিনি টিম ম্যানেজমেন্টের অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
বডি ল্যাংগুয়েজে মনে হয়েছে, তামিম অন্তত বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট ফিটনেসের দোহাই দিয়ে তাকে সেই সুযোগ দেয় কিনা সেটি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন তামিম। এ কারণে নিজ থেকেই বিদায় নিয়েছেন।
সূত্র বলছে, কোচ চন্দ্রিকার সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তামিমের। যেটি চন্দ্রিকার সাম্প্রতিক কথাবার্তায় সুস্পষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার এটিই উপযুক্ত সময় বলে মনে হয়েছে তামিমের।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত