বিপিএলে বসে থাকা জোন্স নিজেকে চেনালেন বিশ্ব মঞ্চে
বাবা-মা বার্বাডোসের হলেও জন্মসূত্রে অ্যারন জোন্স যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ১৯৯৪ সালে নিউইয়র্কের কুইন্সে তার জন্ম। স্বপ্ন ছিল একদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলবেন। সেই লক্ষ্যে বার্বাডোস অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও খেলেছেন। শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় তার। মার্কিন এই ক্রিকেটার ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রংপুর রাইডার্সে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরোটা মৌসুম তাকে ডাক আউটেই বসে থাকতে হয়েছে। এমনকি মেজর লিগ সকারেও সিয়েটা ওরকাসে কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। সেই জোন্সই নিজেকে চেনালেন বিশ্বকাপের মঞ্চে।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রবিবার স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচনা হয়েছে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ডালাসে কানাডাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের নায়ক ছিলেন জোন্স। ২৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার হাফ সেঞ্চুরি ছিল একটি। রবিবার নিজের ২৭তম ম্যাচ খেলতে নেমে রেকর্ডবুক ওলট পালট করেছেন তিনি।
১৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে যুক্তরাষ্ট্র ৪২ রানে হারায় দুই উইকেট। তৃতীয় উইকেটে আন্দ্রেস গুসের সঙ্গে জোন্স গড়েন ১৩১ রানের জুটি। স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান না থাকায় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন জোন্স। ৪০ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসে ম্যাচ জিতিয়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ১০টি ছক্কা। যা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হয়েই নয়, বিশ্বকাপে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক ইনিংসে দশটি ছক্কা মেরে তালিকার তিন নম্বরে ঢুকে গেছেন তিনি। ২০১৬ বিশ্বকাপে ১১ ছক্কা মেরে শীর্ষে আছেন ক্রিস গেইল। এই ব্যাটিং দানব ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপে ১০ ছক্কা মেরে আছেন তালিকার দুই নম্বরে।
এর বাইরেও জোন্স আরও কিছু কীর্তি গড়েছেন। ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। কানাডার দেওয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্য ১৪ বল আগে ছুঁয়ে ফেলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার ইতিহাস গড়েছে। সেখানেও কৃতিত্ব জোন্সের। ১৩১ রানের জুটির পথে জোন্স ও গুস ওভারপ্রতি ১৪.২৯ করে রান তুলেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকোনও সেঞ্চুরি জুটিতে যা সর্বোচ্চ রান রেট।
জোন্স বার্বাডোসে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ধাপ পেরিয়ে ২০১৭ সালে শুরু করেছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। এর আগের বছর শুরু করেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট। লম্বা সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে প্রস্তুত হয়েছেন তিনি। তার প্রতিটি শটেই ফুটে উঠে আত্মবিশ্বাসের ঝলক। রবিবার ম্যাচ সেরা পুরস্কার হাতে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে জোন্স বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এটি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। দলকে জয় এনে দিতে পেরে খুশি। জানতাম আমাদের যে ব্যাটিং সামর্থ্য তাতে ২০০ এর নিচে রান তাড়া করা সম্ভব। আউটফিল্ড ও পিচ ভালো ছিল।’
নিজের ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে জোন্স বলেছেন, ‘আমি আমার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গেছি। আর পাওয়ার হিটিং পছন্দ করি। জানতাম ব্যাটের মাঝে লাগলে বল বহু দূর যাবে। দল চাপে থাকলেই আমার সেরাটা বের হয়।’
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত