গাজায় ইসরায়েলের শেষ কামড়!

| আপডেট :  ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯  | প্রকাশিত :  ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, চুক্তির এই কাঠামোয় রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ। এখন চুক্তিটি কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা করছে তারা।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে হামাস। ওই সময় উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখবে না ইসরায়েলও। এর বদলে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ফিলিস্তিনি অথরিটির (পিএ) সমর্থিত বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাতে ওয়াশিংটন পোস্টে মার্কিন সাংবাদিক ডেভিড ইগনাটিয়াস লিখেছেন, চুক্তির কাঠামোয় দুই পক্ষ সম্মত। কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে, এ নিয়ে তারা আলোচনা করছে। কিন্তু এর মধ্যেই গাজায় হামলা আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল। প্রায় তিন লাখ অধিবাসীকে উত্তর গাজা সিটি থেকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, সরে যেতে বলার পর যেসব ফিলিস্তিনি নিরাপদ স্থানের জন্য পালাচ্ছিল, তাদের গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি স্নাইপাররা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, কয়েকটি জায়গায় ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখেছেন। অনেকে বলছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা যখন নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে, তখনই ইসরায়েলি বাহিনীর এই অতিরিক্ত তৎপরতা আসলে শেষ কামড়ের মতোই বিষয়। ইসরায়েল চাইছে যুদ্ধবিরতির আগে হামাসকে আরও কোণঠাসা করে ফেলা, যেন পরে তারা সহজে সংগঠিত হতে না পারে।

গতকাল ওয়াশিংটন পোস্টের উপসম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ডেভিড ইগনাটিয়াস লিখেছেন, চুক্তির মূল প্রতিবন্ধক হলো দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে হামাস ইসরায়েলি পুরুষ সৈন্যদের মুক্তি দেবে এবং দুই পক্ষ একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে এবং ইসরায়েল তাদের সব সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে।

তিনি জানিয়েছেন, আলোচনায় বড় যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে, সেটি হলো হামাস এবং ইসরায়েল উভয়ই গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যেটি যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে শুরু হবে। ওই সময় হামাস ও ইসরায়েল কেউই গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, গাজার নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যদের নেওয়া হবে ফিলিস্তিনি অথরিটির ২ হাজার ৫০০ শক্তিশালী সদস্যের মধ্য থেকে। আর এতে সমর্থন দেবে মধ্যপন্থি আরব দেশগুলো।
ওয়াশিংটন পোস্টকে মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে জানিয়েছে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছে। ২০০৭ সালে ফাতাহ সমর্থিত ফিলিস্তিনি অথরিটির কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে হামাস। এরপর থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছেই রয়েছে। এদিকে গত বুধবার উড়োজাহাজ থেকে লিফলেট ফেলে গাজা সিটিতে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে শহর ছাড়তে বলা হয়। তাদের নিরাপদে দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও আজ-জাওয়াইদায় যেতে বলা হয়। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই নির্দেশ না মানতে গাজা সিটির বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস-শাসিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই নির্দেশকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

দেইর আল-বালাহতে থাকা আলজাজিরা প্রতিবেদক বলেন, ইসরায়েলি হামলা জোরদার হওয়ায় গাজা সিটির বাসিন্দাদের মনে হচ্ছে, তারা আটকা পড়েছেন। কোথায় যাবেন, তা জানেন না। এখানে কোনো বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী বা রেড ক্রসেরও উপস্থিতি নেই। ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম এমন কোনো সংস্থা নেই গাজা সিটিতে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত