মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা: বাইডেনের কূটনীতির ব্যর্থতা নাকি প্রতারণা?

| আপডেট :  ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১  | প্রকাশিত :  ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১

 

ইসরায়েলে গত মঙ্গলবার ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর পর ইরানের প্রচেষ্টাকে ‘অকার্যকর’ বলে আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা দেশটিই ইরানকে কঠোর পরিণতির জন্য হুঁশিয়ারি জানিয়েছে।

ইসরায়েলকে এক বছর ধরে গাজা ও লেবাননে অভিযান পরিচালনায় অব্যাহত সহায়তা দিয়ে ইরানকে উল্টো কেবল উসকানি দিয়ে গেছে হোয়াইট হাউজ। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর রহমান বলেছেন, এই প্ররোচনার ফলে পুরো অঞ্চলব্যাপী বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

গাজা ও লেবানন ইস্যুতে বিগত বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে নানা বৈপরীত্য দেখা গেছে। একদিকে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে পূর্ণ সমর্থন বজায় রেখেছিল তারা। অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতেও একের পর এক বৈঠকের আয়োজন করে গেছে।

লেবাননেও এই দ্বিমুখী মার্কিন নীতি দেখা গেছে। তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে এখানেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আবার একই সঙ্গে শান্তিচুক্তির কথাও হোয়াইট হাউজ বারবার বলেছে।

ইউএস পলিসি ফেলো তারিক কেন্নেই শাওয়া বলেছেন, ‘শেষ ১২ মাসে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে দুভাবে দেখা যায়। হয় এটি ছিল চরম ব্যর্থতা অথবা ‘প্রতারণাপূর্ণ’ সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ কিন্তু অনেকটাই কাছাকাছি। মার্কিন প্রশাসন আসলে মানবাধিকার, যুদ্ধবিরতি এসব বাগাড়ম্বর দিয়ে সবার নজর ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। আর এই সময়ে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়ে গেছে।’

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রশাসনের আন্তরিকতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ইসরায়েলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যর্থতার কারণে।

বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে যথেষ্ট শক্তি প্রদর্শন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলেছেন, ‘আমি মনে করি শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এলে ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আলোচনায় বসাতে পারলে, সেটা হতো মার্কিন সক্ষমতার প্রমাণ। কিন্তু এক পক্ষকে নিঃশর্তভাবে সহায়তা করতে থাকা ও সেটা থেকে সংকট দূর হবে আশা করলে তাকে কোনোভাবেই সক্ষমতা বলা যায় না।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এক যৌথ বিবৃতিতে লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। গত এক বছর ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বাইডেনের একাধিক প্রস্তাবও বিভিন্নভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

তবে বাইডেন প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, সেটাও অনেকে মানতে নারাজ। কেননা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল কিনা, সেটা নিয়েই অনেকে সন্দিহান।

কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেছেন, ‘এটা ব্যর্থতাও না। পুরো বিষয়টাই ছিল প্রতারণাপূর্ণ। তারা উত্তেজনা প্রশমন, যুদ্ধবিরতি এসবের কথা বললেও নেতানিয়াহু যখন একের পর এক আলোচনা নস্যাৎ করে দিচ্ছিল, তখন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

এদিকে, ৩০ সেপ্টেম্বর, সাবেক এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসনের দূত অ্যামোস হোচেস্টেইন হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালাতে ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। তিনি ইসরায়েল ত্যাগ করার ২৪ ঘণ্টা পরেই দেশব্যাপী পেজার বিস্ফোরণের ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল।

ইরানের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ পুষে রাখা ব্যক্তিরাও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দুর্বল মনে করছেন। সাবেক সেনা কর্মকর্তা কার্ক লিপোল্ড বলেছেন, ‘ইরানকে অন্তত দায়ী করার আগ পর্যন্ত কোনও কিছুই পাল্টাবে না।’

শাস্তিস্বরূপ ইরানকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত করে ফেলার পাশাপাশি সমুদ্রপথে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন লিপোল্ড। এতেও কাজ না হলে শেষ পদক্ষেপ হতে পারে সামরিক শক্তি প্রয়োগ।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সাবেক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল অ্যান্থনি শেফার বলেছেন, ‘বেশি আগ্রাসী না হয়ে ইরানকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট কোনও অবস্থান নিচ্ছে না। বর্তমান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তারাই দায়ী।’

মঙ্গলবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এক জনসভায় প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘অযোগ্য দুজন ব্যক্তি দেশ পরিচালনা করছে। অবশ্য তারা পরিচালনা করছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।’

ট্রাম্প বরাবরই ইরানের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষপাতী।

এদিকে বুধবার বাইডেন বলেছেন, তিনি কোনোভাবেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলা সমর্থন করবেন না। তিনি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারে সবসময় সোচ্চার হলেও সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান।

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে পারসি বলেছেন, ‘সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধ হলে তার জন্য দায়ী থাকবে বাইডেন প্রশাসন। কারণ বাস্তবতা হলো, ইসরায়েলের পক্ষে গাজায় গণহত্যা বা আঞ্চলিক আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়।’

তথ্যসূত্র: মিডলইস্ট আই

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত