হাসিনার ‘দুর্নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় বিশ্বনেতাদের দুষলেন ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল ‘ভুয়া’। তিনি উল্লেখ করেন, হাসিনার আমলে অর্জিত প্রবৃদ্ধির বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) দাভোসে এসে সবাইকে দেশ চালানোর উপদেশ দিয়েছেন, কিন্তু কেউ তার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এটা বিশ্ব ব্যবস্থার দুর্বলতা।’
২০১৬ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) তৈরি করা একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, শুধু ২০১৩ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ছিল ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সিপিডির হিসাবে, ২০১৩ সালে পাচার হওয়া অর্থ দেশের শিক্ষা বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ গুণ বেশি, আর স্বাস্থ্য বাজেটের তুলনায় বেশি ৮ দশমিক ২ গুণ। পাচার হওয়া ওই অর্থের ২৫ শতাংশ হারে যদি কর পাওয়া যেত তাহলে স্বাস্থ্য বাজেট তিন গুণ এবং শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ করা সম্ভব হতো।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে পুঁজি পাচার বাবদ বাংলাদেশ বছরে গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। দেশের জাতীয় আয়ের এক বিরাট অংশ। এই পরিমাণ অর্থ পাচার কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার।
ইউনূস অভিযোগ করেন, বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, যা একটি বড় ভুল।
শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে দেশের অর্থনীতি এবং তৈরি পোশাক খাত ব্যাপক প্রবৃদ্ধি লাভ করলেও, তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনসহ নানা অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে।
তবে, সরকার পতনের আন্দোলন, সহিংস বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউনূস আরও বলেন, তিনি (হাসিনা) বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হার সবার চেয়ে বেশি। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি পুরোপুরি ভুয়া।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই ও সমতাভিত্তিক হওয়া উচিত এবং সম্পদের বৈষম্য কমানো জরুরি’।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতা নেওয়ার সময় ছিল প্রায় ৫ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়। তবে, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দারিদ্র্য কমানো এবং দরিদ্র মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন তার কাছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে জাের দেন। এছাড়া তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের ভারত সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি তাকে কষ্ট দেয় এবং আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা নেই।
ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটি সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকবেন, তবে বাংলাদেশ ছাড়া তা অসম্পূর্ণ থাকবে।’।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত