ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলায়: ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
সাভারের আমিনবাজারে শবে বরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মালেকসহ ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা জেলার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ ইসমত জাহানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ২৫ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় দেয়া হলো।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো: আব্দুল মালেক, সাঈদ মেম্বর, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহার ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, আসলাম মিয়া, আলম, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, রানা ও আ. হামিদ। তাদের সবাইকেই ২০ হাজার টাকা অথর্দণ্ড অনাদায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো: শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, মো. ওয়াসিম, সাত্তার, সেলিম, মনির, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, অভি, শাহাদাত, টুটুল, মাসুদ, মোখলেস, নূর ইসলাম ও তোতন। এছাড়া, তাদের সবাইকেই ১০ হাজার টাকা অথর্দণ্ড অনাদায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
এর আগে, গেল ২২শে নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২রা ডিসেম্বর এই রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
২০১১ সালের ১৭ই জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলারচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন: ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান।
নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ওই ঘটনার পর আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন আবদুল মালেক নামে স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ী।
এরপর ছাত্র, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার মুখে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
এরপর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহানের আদালতে আসে। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলার ৬০ আসামির মধ্যে হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ছয়জন পলাতক, একজন কারাগারে ও ৫২ জন জামিনে আছেন। এছাড়া দুই আসামি মারা যাওয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত