অবশেষে মেয়েটি পরিবারের কাছে ফিরল, জানা গেল পরিচয়

| আপডেট :  ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৪  | প্রকাশিত :  ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৪

অবশেষে খুলনার রাস্তায় ঘুরতে থাকা মেয়েটি পরিবারের সন্ধান পেয়েছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) তার পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রহণ করেন। এদিনই তারা তাদের গ্রামের বাড়ি ফিরবেন।

এর আগে হস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ফেসবুকে ভাইরাল হন অচেনা একটি মেয়ে।

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও কিশোরী বিভ্রান্ত হয়ে মহানগরী খুলনায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। রাতে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী মেয়েটিকে রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে এ খবর তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরে মেয়েটিকে তাদের জিম্মায় নেন। তাদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীনগরে।

খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলী আকবর জানান, উই আর বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে কেউ একজন কমেন্ট করে মেয়েটির খোঁজ দেয়। পরে গ্রুপের এডমিন তাকে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা অক্সিজেন ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা রূপসা থেকে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মেয়েটি তখনও প্রলাপ বকছিল। ফেসবুকের মাধ্যমেই ওই কিশোরীর বাবা-মা ও বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সংগঠনটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েটির বান্ধবী জানায়, সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গাজীপুরের নিজ বাসা থেকে তার বান্ধবী বের হয়ে যায়। তার পর থেকে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসক ডা. অমিত সাহা জানান, মেয়েটি মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা ভাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

মেয়েটির মা-বাবা জানান, আকস্মিকভাবে মেয়েকে হারিয়ে তারা কি করবে বুঝতে পারছিলেন না। কেন সে ঘর ছাড়লো বা এই অবস্থা হয়েছে কিছুই জানেন না তারা।

এর আগে, খুলনার সোনাডাঙ্গা এবং শিববাড়ীর মাঝামাঝি সামি হাসপাতালের সামনে এক তরুণীর দেখা মেলে। উদ্ভ্রান্তের মতো তার চলাফেরা। বয়স আনুমানিক ১৬-১৮ বছর হবে। কোনো কথা বলে না। তাকে কেউ চেনেও না। অনেকের চোখে মেয়েটি ‘পাগলি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাকে ঘিরে উৎসুক কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে। কারণ মেয়েটিকে দেখে ভালো পরিবারের সন্তান বলেই মনে হয়।

পরে জানা যায়, মেয়েটির নাম ঈশিতা। তার বাড়ি গাজীপুরে। কিন্তু সে খুলনা কীভাবে এলো? মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেতে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ প্রচারণা চালায়। বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ শুরু করে ‘ওয়াব (উই আর বাংলাদেশ)’ নামের একটি গ্রুপ।

পরে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেতে মেয়েটির ছবি দিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়। তাকে চিকিৎসা দিতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আনন্দের খবরটি দিয়েছেন ওয়াবের সদস্যরা। তারা অবশেষে মেয়েটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন।

একটি পোস্টে বলা হয়—’গতকাল দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত-মানে সকাল পর্যন্ত ঘুমাইনি। সেই সাথে বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ঘুমায়নি। গাজীপুর থেকে মেয়েটির বাবা-মা এসেছেন। আমার সাথে প্রত্যেক ৩০-৪০ মিনিট পরপর তাদের কথা হয়েছে। মেয়েটিকে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করতে সক্ষম হয়েছি আমরা, আলহামদুলিল্লাহ। এটাই ভালো কাজের তৃপ্তি। আলো আসবেই, না আসলে সবাই মিলে টেনে আনব ইনশাআল্লাহ।’

এর আগে ফেসবুকে ‘এসপি বাংলা টিভি’, ‘অন্যরকম বাংলাদেশ (এআইবি)’ কিংবা ‘গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার্স ফোরাম’ নামের বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালানো হয়। এসবের কল্যাণেই মেয়েটির বাবা-মায়ের সন্ধান মেলে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সেই মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেয়েছি আমরা। ওর মায়ের সাথে কথা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে ওর বাবা-মা। ওর বাড়ি গাজীপুর। আমাদের হেফাজতে খুলনা মেডিক্যালে আছে বোনটি। বিস্তারিত জানাবো। আলো আসবেই ইনশাল্লাহ। We Are Bangladesh (WAB)। এই মেয়েটিকে খুলনা শিববাড়ী এবং সোনাডাঙ্গার মাঝামাঝি সামি হাসপাতালের সামনে পাওয়া গিয়েছে। মেয়েটি কথা বলছে না। বয়স আনুমানিক ১৬-১৮ মনে হচ্ছে। সম্ভবত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। দেখে মনে হচ্ছে ভালো পরিবারের মেয়ে। যদি কেউ পরিচয় জানতে পারেন তাহলে সোনাডাঙ্গা থানায় যোগাযোগের অনুরোধ করা হলো!’

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত