৯০-এর ছাত্রনেতারা নেতৃত্বে আসছেন
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিকে চাঙ্গা করতে শিগগিরই ঘোষণা হচ্ছে নতুন কমিটি। দুই সিটির খসড়া কমিটি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ’৯০-এর ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া একাধিক গ্রুপ। তারা ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের চেয়ে নিজস্ব বলয়ের লোকদের নেতৃত্বে আনতে নানা কৌশল করছেন।
নতুন কমিটিতে যাদের নাম আলোচনায় আসছে তাদের ত্যাগ ও আন্দোলনের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠছে। শুধু তাই নয়, বহিরাগত নেতাদের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের গুঞ্জনে ঢাকার স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকেও তারা অবহিত করেছেন।
মহানগরের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী জানান, নতুন কমিটি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ঢাকা সম্পর্কে যাদের জানাশোনা আছে তাদেরই যেন নেতৃত্বে আনা হয়। এমন কাউকে যেন দায়িত্ব দেওয়া না হয়, যারা ঢাকার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্পর্কে অবহিত নন।
ঢাকাকে শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই অলিগলি চিনতে হবে। নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে তাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে। উল্লেখ্য, সবশেষ মহানগরকে দুই ভাগ করে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনার কারণে আমাদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বলতে গেলে থমকে গেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা সীমিত পরিসরে দল গোছানোর চেষ্টা করছি। এর অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিট। তাই কোনো বলয় বা কারও আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরির জন্য মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে না। যারা যোগ্য, ত্যাগী এবং আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখছেন তাদের নেতৃত্বে আনা হবে। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি তদারকি করছেন। এখানে অন্য কিছু হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, নানা কারণে আমরা প্রত্যাশিত সফলতা দেখাতে পারিনি এটা সত্যি। কিন্তু যারা পারবে তারা তো নতুন করে নাজিল হবে না। আমাদের যদি ভুলভ্রান্তি থাকে সেগুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে সুযোগ দিতে পারে।
তিনি বলেন, ব্যর্থতার তকমা দিয়ে কেউ যাতে নিজেদের আখের না গোছায় সেদিকে হাইকমান্ডকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের বলয় সৃষ্টি করতে বাইরে থেকে কাউকে এনে নেতৃত্ব দেওয়া হতে পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাছাড়া বাইরে থেকে কাউকে দায়িত্ব দিলেই হবে না। মহানগর নেতাকর্মীদের পালস বুঝতে হবে। সর্বোপরি আমি মনে করি আমাদের সব ক্ষেত্রে সমন্বয়ের দরকার। সবাইকে সমন্বয় করে কমিটি করতে হবে।
মহানগর কমিটি নিয়ে দলের একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। তাদের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও। মহানগরের প্রভাবশালী নেতা চাচ্ছেন দুই সিটির শীর্ষ নেতৃত্বে তার নিজের লোক আনতে। অপর দিকে তার বিরোধীরাও বেশ সক্রিয়। মহানগর কমিটি থেকে এই নেতার অনুসারীদের যেকোনো মূল্যে বিদায় করাই তাদের লক্ষ্য। ওই গ্রুপটি পেছন থেকে প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকাপন্থিদের মদদ দিচ্ছে।
দুই সিটির শীর্ষ নেতৃত্বে খোকার অনুসারীদের নেতৃত্বে আনতে চালাচ্ছে জোর চেষ্টা। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক নেতা প্রস্তাব তোলেন, ’৯০-এর সাবেক ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা উচিত। তার এমন প্রস্তাবে সায় দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপরই মহানগরের দায়িত্বে ’৯০-এর ছাত্রনেতাদের নাম সামনে চলে আসে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অথবা আহ্বায়ক হিসাবে আলোচনায় আছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ’৯০-এর সাবেক ছাত্রনেতা আমানউল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। সদস্য সচিব কিংবা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আলোচনা আছেন, প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।
দক্ষিণের আহ্বায়ক হিসাবে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ব্যাপারে কোনো গ্রুপের বিরোধিতা নেই। তবে আমানের ব্যাপারে আব্বাস সমর্থকরা বিরোধিতা করছেন। তবে শেষ মুহূর্তে আমানকে আহ্বায়ক করা হলে মজনু অথবা হাবিবকে যেন সদস্য সচিব রাখা হয় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন আব্বাস গ্রুপ। এরা দুজনই আব্বাসের ঘনিষ্ঠ।
উত্তরে আহ্বায়ক কিংবা সভাপতি হিসাবে আলোচনা আছেন শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বর্তমান সভাপতি এমএ কাইয়ুম ও বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সাধারণ সম্পাদক কিংবা সদস্য সচিব হিসাবে আলোচনায় আছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকি, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাবেক ফুটবল তারকা আমিনুল হক, ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন ও বজলুল বাসিত আঞ্জু।
জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, ঢাকায় আমার জন্ম। মহানগর রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি। মহানগর ছাত্রদলের পর যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছি। আমি মহানগরীতেই রাজনীতি করতে চাই। হাইকমান্ড সুযোগ দিলে আমি প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, মহানগরীতে তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা পরীক্ষিত এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হলে সংগঠন গতি পাবে বলে আশা করি।
বিগত এক যুগ ধরে বিএনপির পুনর্গঠন থমকে আছে। বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ করতে পারছে না দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুরোদমে পুনর্গঠনের হাত দেয়। কিন্তু করোনার কারণে তা ফের স্থবির হয়ে পড়ে। কয়েক বছরে ৮২টির মধ্যে মাত্র ৩৭টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি পুনর্গঠন শেষ হয়েছে। তবে এসব জেলার আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি।
করোনার মধ্যেই ফের দল গোছানোর উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় ঢাকাসহ ১১টি মহানগরের কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত