পাঞ্জশের উপত্যকায় তালেবান ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ চলছে

| আপডেট :  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১৯  | প্রকাশিত :  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১৯

আফগানিস্তানের পাঞ্জশের উপত্যকার দখল নিয়ে তালেবান ও প্রতিরোধকামী বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। তালেবান দাবি করেছে, তারা পাঞ্জশেরের একাধিক এলাকা দখলে নিয়েছে এবং যুদ্ধে প্রতিরোধকামী বাহিনী ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট বা এনআরএফের বহু সদস্য হতাহত হয়েছে। তবে এনআরএফ এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, পাঞ্জশেরের প্রতিটি প্রবেশদ্বারই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উল্টো তালেবানের কয়েকশ’ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে তারা। একইসঙ্গে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে অর্ধশত তালেবান সদস্যকে।

বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের একমাত্র প্রদেশ পাঞ্জশের যা এখনো স্বাধীন রয়েছে। বাকি সবগুলো প্রদেশের গত ১৫ আগস্টের মধ্যে তালেবানের হাতে পতন ঘটেছে।

নিজেদের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে এনআরএফ। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় তালেবানবিরোধী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে সরকারি বাহিনীর সদস্যরাও।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর তালেবান সেখানে অভিযান চালাতে শুরু করেছে। তিনি রয়টার্স বার্তা সংস্থার কাছে দাবি করেন, তালেবান মিলিশিয়ারা পাঞ্জশের উপত্যকায় ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কিন্তু পাঞ্জশেরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট জানিয়েছে, পাঞ্জশের উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে তাদের হাতে এবং তালেবানকে তারা হটিয়ে দিয়েছেন। তবে কোনো পক্ষের দাবিই নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।

আফগানিস্তানের এই অঞ্চলটি বরাবরই তালেবানের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধের জন্য খ্যাত। ১৯৮০ সালের পরে যখন আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে জড়িয়ে পরে তখনও এই বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। তবে তালেবানের ৫ বছরের শাসনকালেও তারা পাঞ্জশের দখল করতে পারেনি। পাঞ্জশেরের সিংহ হিসেবে পরিচিত আহমদ শাহ মাসুদ। তিনিই তালেবানের প্রথম শাসনের সময় তাদের হাত থেকে নিজের এলাকাকে বাঁচিয়েছিলেন। শত চেষ্টা করেও সেবার পাঞ্জশের দখল করতে পারেনি তালেবান। আহমদ শাহ মাসুদের সঙ্গে কোনোভাবে না পেরে তাকে হত্যায় নতুন ছক কষে জঙ্গিরা। ২০০১ সালে তালেবানের মিত্রগোষ্ঠী আল কায়েদা এক আত্মঘাতী স্কোয়াড পাঠিয়ে আহমদ শাহ মাসুদকে হত্যা করে। তখন তার ছেলে আহমদ মাসুদ ছিলেন একজন কিশোর। বর্তমানে সেই কিশোরই পাঞ্জশের উপত্যকার প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা।

নাম যেমন তার বাবার মতো, সাহসও বাবার মতোই। ৩২ বছর বয়সী মাসুদ বৃটেনের স্যান্ডহার্স্ট মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আফগানিস্তানের কিংবদন্তী প্রতিরোধ কমান্ডারের ছেলে হিসেবে তিনি পাঞ্জশেরকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। বৃটেনের স্যান্ডহার্স্ট থেকে পাশ করে বেরুনোর পর আহমদ মাসুদ লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ওয়ার স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ২০১৬ সালে তিনি দেশে ফিরে যান। গতমাসে তিনি তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট গঠন করেন। তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আহমদ মাসুদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি আত্মসমর্পন করার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাকেই শ্রেয় মনে করবো। আমি আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে। আত্মসমর্পন শব্দটি আমার অভিধানে নেই। আহমদ মাসুদ এখন কয়েক হাজার স্থানীয় মিলিশিয়া এবং সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত