সাইফুর রহমানের হাতেই দেশের অর্থনীতি সফল হয়েছে: ফখরুল

| আপডেট :  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৫৩  | প্রকাশিত :  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৫৩

বিএনপির সময়ে সাইফুর রহমানের হাতেই দেশে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’র সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবন তুলে ধরতে গিয়ে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান সাহেব মনে করেছিলেন যে, আমি যদি এই মানুষটিকে (সাইফুর রহমান) আমার সঙ্গে পাই তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে, ব্যবসা- বাণিজ্যিকে একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসে দেশটাকে আমরা সৃজনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে সক্ষম হবো। তিনি প্রমাণও করেছিলেন। অর্থনীতিবিদদের সাথে যখন কথা বলা হয় তখন তারা একটা কথা বলেন যে, সাইফুর রহমান সাহেবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব একটা স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি। তারা যেটা বলেন, আমরা বন্ধু আছেন একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেব, তিনি বলেন, তার(সাইফুর রহমান) সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিলো তিনি একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমী উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশে।

‘‘একটা দেশের অর্থনীতিকে সফল করবার জন্যে, তার কাছ থেকে ভালো বিষয়গুলোকে তুলে আনবার জন্যে একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনোমিক্সের প্রয়োজন আছে। সেটা তিনি (সাইফুর রহমান) করে্ছিলেন। ওই সময়ে ব্যাংকিং সেক্টারে ডিসিপ্লিন ছিলো, বীমা সেক্টারে ডিসিপ্লিন ছিলো এবং শেয়ার মার্কেটে ডিসিপ্লিন ছিলো-এই কথাগুলো আমাদেরকে আজকে জোরেশোরে অর্থনীতিবিদরা বলছেন এবং তারা তুলনা করে সেই কথাগুলোই বলছেন।”

পোষাক শিল্পের বহুমুখীকরণে সাইফুর রহমানের চিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শুধুমাত্র গার্মেন্টেসে উনি থাকতে চাননি। গার্মেন্টস শিল্পটাকে অনেক সময়ে ব্যঙ্গ করে বলতেন, তুমি শুধুমাত্র দর্জির একটা শিল্প বানাইবা। তিনি চাইতেন যে, এই শিল্প থেকে সারপ্লাস যে ক্যাপটিালটা আসবে, সেই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে ভারী শিল্প তৈরি হবে। অর্থাত বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফেকচারীং কান্ট্রি হিসেবে তৈরি করতে তিনি চেয়েছিলেন। যে কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে।”

‘‘ এভাবে যদি দেখি-কতগুলো মৌলিক কাজ তিনি করেছিলেন। ভ্যাট প্রবর্তন করেছেন চরম বিরোধিতার মুখে. যার ফলোশ্রুতি আজকে বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণ অনেক অনেকগুন বেড়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং নারী শিক্ষার উন্নয়ন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিক নির্দেশনায় নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষায় দরিদ্র শিশুদের নিয়ে আসার জন্য তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রবর্তন করেছিলেন।এসব ছিলো তার সৃজনশীল পদক্ষেপ।”

তিনি বলেন, ‘‘সাইফুর রহমান সাহেবের ওপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আস্থা ছিলো, জিয়াউর রহমানের সাহেবের একটা আস্থা ছিলো, গোটা জাতির একটা আস্থা ছিলো। ১২ বার যিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ রাতারাতি ভালো বাংলাদেশ হয়ে যায়নি। যারা আজকে বড় বড় কথা বলেছেন এখন।”

‘‘ পার্থক্যটা এখানে যে, তিনি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট নিত চান নাই, তিনি ঋণের আবদ্ধ হতে চান নাই, ঋণ ডুবে মরতে চান নাই। যে কারণে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ধীরে ধীরে আগে খুটিটাকে শক্ত করে দে্শের অর্থনীতিটাকে উঠাতে চেয়েছেন।সেজন্য স্লো যেতে চেয়েছেন।আমরা তার কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ এম সাইফুর রহমান সাহেব এমন একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি ব্যক্তি হিসেবে, পেশাজীবী হিসেবে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে. রাজনীতিবিদ হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে সর্বক্ষেত্রে তিনি শুধু সফল নয়, দিক নির্দেশনা রেখে গেছেন। বিএনপি তাকে গর্ব বোধ করে।”

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। ভার্চুয়াল আলোচনার শুরুতে ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিজের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে এই সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৬ সালে সরকারের বানিজ্য উপদেষ্টা হন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে সদস্য নির্বাচিত হন। এম সাইফুর রহমান বানিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও দীর্ঘ সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১২ বার অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফের সভাপতিত্বে ও সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউস এবং প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ এম নাসের রহমান বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত