অসামে উচ্ছেদ অভিযানে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় বিরোধীদের তীব্র নিন্দা
ভারতের বিজেপিশাসিত আসামের সিপাঝাড়ের ধলপুরে উচ্ছেদ অভিযান চালানোকে কেন্দ্র পুলিশের গুলিতে সাদ্দাম হুসেন ও শেখ ফরিদ নামে দু’জন নিহত হওয়ায় বিরোধীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আসামের দরং জেলার সিপাঝাড়ের ধলপুরে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময়ে স্থানীয় মানুষজন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে রুখে দাঁড়ান।
দেশটির সরকারের দাবি, ওই এলাকায় তারা অবৈধভাবে বাস করছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জবরদখল করা জমি মুক্ত করতে। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রসঙ্গত, দরংয়ের পুলিশ সুপার সুশান্ত বিশ্বশর্মা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ভাই।
শুক্রবার কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য রিপুন বরার নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল আসামের রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর সাথে দেখা করে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছে। এর পাশাপাশি, অবিলম্বে দরংয়ের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, গতকালের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার দরং জেলায় ১২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল, ‘অল অসম মাইনরিটিজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আমসু) এবং ‘জমিয়ত-ই-উলেমায়ে হিন্দ’। উজান এবং নিম্ন আসামের বিভিন্ন এলাকাতেই তার প্রভাব পড়েছে।
‘নবভারত টাইমস’ জানিয়েছে ১২ ঘণ্টার বনধে দরং জেলায় জনজীবনে প্রভাব পড়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং রাস্তায় খুব কম যানবাহন দেখা গেছে। সিপাঝাড়ের গরুখুটি, ধোলপুর ১ ও ৩ গ্রামে ভারী নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যেখানে বেদখলের বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল।
এদিকে, দরংয়ের পুলিশ সুপার সুশান্তবিশ্ব শর্মাসহ অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ‘আমসু’র পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ এবং আহতদের পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়েছে।
আসামের এমপি ও লোকসভায় কংগ্রেসের সহকারী দলনেতা গৌরব গগৈ শুক্রবার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এবং তার পুলিশ সুপার ভাই মিলে অশান্তি ছড়াচ্ছেন। বৃহস্পতিবার পুলিশের আচরণ প্রমাণ করছে, শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কোনো সদিচ্ছাই ছিল না।’ এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া বার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারি নিয়ে সরকারের অভিযোগের সাথে জাআতীয় নাগরিক পঞ্জি ‘এনআরসি’ খসড়া তালিকার তথ্য কিন্তু মিলছে না।’
পুলিশ এবং রাজ্যের শাসকদল বিজেপি’র অভিযোগ, কয়েকশো ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ওই এলাকায় অনেক জমি জবরদখল করেছে। তাদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। জেলা পুলিশ কর্মকর্তা সুশান্তবিশ্ব শর্মার দাবি, ‘লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশকর্মীদের আঘাত করেছে জবরদখলকারীরা।’
আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভুপেন কুমার বরা বলেন, ‘হাইকোর্ট কোভিড অতিমারির সময়ে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা অহংকারি ও একনায়কত্ববাদী মানসিকতা নিয়ে ১৯৭০ সাল থেকে বসবাসকারী ধলপুরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ শুরু করেন। সরকার আগে এসব মানুষদের পুনঃসংস্থাপনের ব্যবস্থা করুক। বলপ্রয়োগ করে নিরীহ মানুষদের উচ্ছেদ বন্ধ করা হোক।
তিনি আরো বলেন, বিজেপি সরকার ভুয়া এনকাউন্টার এবং এখন প্রকাশ্যে মানুষকে গুলি করে বুলেটের ভাষায় সরকার চালানোর অভিসন্ধি রচনা করেছে।’
এআইইউডিএফ নেতা ও ধিংয়ের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকারের শুধু রক্ত চাই, কারণ উপনির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এই সরকার ব্যর্থ। আসামে রক্তপাতের সফট টার্গেট ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই। গোটা বিশ্বে এমন ঘটনার নজির নেই।’
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দরং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেছে। রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান ভূপেন বরা, রাজ্যসভার সদস্য রিপুন বরা, কংগ্রেস বিধায়ক দলের উপনেতা রাকিবুল হুসেন এবং অন্য সিনিয়র নেতারা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। সূত্র : পার্সটুডে
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত