ফিলিস্তিনিদের হত্যায় মার্কিনিদের প্রকাশ্য মদত আর উইঘুরদের জন্য মায়াকান্না
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েকটি মিত্র দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা–মার্কিন জোট–জাতিসংঘের একটি পার্শ্ব সম্মেলনে চীনের সিনচিয়াংয়ে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘন, জবরদস্তি শ্রম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ, এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছে। সেখানে তারা চীনে মুসলমান তথা উইঘুরদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমসমূহে তাদের এসব বক্তব্য ফলাও করে প্রচার হয়। ফলে সারা বিশ্ব খুব সহজেই তাদের এই চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পায়।
আসলে বহু বছর ধরে মার্কিন জোট চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর নির্যাতনের প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাদের পালিত গণমাধ্যমগুলো জোটের দোসরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এসব গণমাধ্যম তাদের প্রভুদের খুশি এবং চীনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণের পটভূমি তৈরি করতে সিনচিয়াং নিয়ে নানা রকম গাঁজাখুরিগল্প তৈরি ও প্রচার করে চলছে। এসবের ভিত্তিতে জোটের সদস্যরা ইতোমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপসহ নানা কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছে।
এবার মার্কিন জোট মনে করেছিল যে,বিশ্ববাসী, বিশেষ করে মুসলমানরা, তাদের এসব মিথ্যা গল্প শুনে আনন্দিত হবে এবং তাদের বাহবা দিবে। কিন্তু সম্মেলন শেষে তাদের আশাহত হতে হয়েছে। কারণ বিশ্ববাসী আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে জোটের চীন-বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তৃতায় বিস্মিত হয়েছে। কারণ মার্কিন জোটের চীন-বিরোধী সম্মেলনটি এমন এক সময় হয়েছে, যখন তাদের মদদপুষ্ট বর্ণবাদী ইসরাইল নির্বিচারে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করছে। এমনকি নিরীহ নারী-শিশুরাও দখলদার বাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
ফলে তাদের উইঘুরদের কথিত নির্যাতনের কথা বলে মুসলমানদের মন জয় করার পাঁয়তারা হালে পানি পায়নি; বরং তাদের নির্লজ্জ কপটতা ও দ্বিচারিতা হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে। ইসরাইলের চলমান বর্বরতা মার্কিন জোটের ইসরাইলের প্রতি নতজানু ও তোষামোদ নীতি মুসলমানসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের স্মৃতিপটে আবারও জাগিয়ে তুলেছে। এহেন বর্বরতা সবাইকে মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে এ জোটের সদস্যরা একে অপরের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইসরাইল নামক অবৈধ ‘বিষফোঁড়া’র জন্ম দিয়েছিল।
বিশ্ববাসীর সব সময় মনে আছে, কীভাবে মার্কিন জোট একেবারে শূন্য থেকে ইসরাইলকে একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত করেছে। বিবেকবানরা কিছুতেই ভুলতে পারছে না, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরাইলকে তাদের মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে গত সত্তর বছরে ধরে রক্ষা করে চলছে।
মার্কিন জোটের দ্বিচারিতা মুসলমানদের বুঝতে সহায়তা করেছে যে, এসব পশ্চিমা দেশ আসলে উইঘুরদের জন্য মায়াকান্না করলেও তারা আসলে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি নিয়ে খেলা করছে। জোট পবিত্র আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুসলমানদের চীনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে চায়। এর মাধ্যমে তারা চীন এবং মুসলমান উভয়ের ক্ষতি করতে চায়। কারণ মার্কিন জোট জানে যে, যতক্ষন এই দুই শক্তি একজোট থাকবে, ততক্ষন তারা কারোরই ক্ষতি করতে পারবে না। উল্টো, তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে এবং পক্ষান্তরে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দুরাবস্থা যেমন আসল বন্ধু এবং শত্রু চেনাতে সাহায্য করে, তেমনি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্তমান বর্বরোচিত হামলা মুসলমানদের তাদের প্রকৃত বন্ধু এবং শত্রু চিনতে সাহায্য করেছে। তারা এখন বুঝতে পারছেন যে, এমন দুর্দিনে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে চীন প্রকারান্তরে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরই পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন যে, চীন ইতোমধ্যে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। চলতি মাসের নিরাপত্তা পরিষদের পালাক্রমিক সভাপতি হিসেবে যুদ্ধ বন্ধে পরিষদের জরুরি সভা আহ্বান করেছে চীন।সেইসঙ্গে নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতিও তৈরি করেছে। এতে সব সদস্যের সম্মতি আদায় করতে পারলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে চীন এটি প্রকাশ করতে পারছে না। তবে, চীন তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমাদের অপপ্রচার সত্ত্বেও চীন সিনচিয়াংয়ের উইঘুরসহ অন্যান্য জাতির লোকদের জীবনযাত্রার গুণগত মান উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। পরিসংখ্যান মতে,সেখানকার শহুরে বাসিন্দাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ে, ৮.৬ শতাংশ বেড়েছে। আর একই সময়ে গ্রামীণ লোকদের আয় বেড়েছে ৮.৯ শতাংশ।
চরম দারিদ্র্যতা ইতোমধ্যেই সিনচিয়াং থেকে চির বিদায় নিয়েছে। অপেক্ষাকৃত দারিদ্র্য এলাকাসমূহ তথা শাশে, মইয়ু, এবং আকচো এখন সম্পূর্ণ চরম দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এসব এলাকার জনগণ এখন উন্নত স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক নাগরিক অধিকার ভোগ করছেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, মার্কিন জোট কখনো চীনের এসব সফলতা ও মুসলিম কল্যাণের কাজগুলো প্রচার করে না।
তবে, মুসলমানরা বোকা নয়। মার্কিন জোট মুসলমানদের বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও মুসলমানরা জানে যে, এ জোট সিনচিয়াং ইস্যু চীন এবং মুসলমানদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে ব্যবহার করছে। এটি আসলে জোটের মুসলমানদের জন্য মায়াকান্না বৈ আর কিছুই নয়।
মার্কিন জোট যদি আসলে বন্ধু হতো, তাহলে অন্য এলাকার মুসলমানদের রক্ত ঝরিয়ে উইঘুরদের জন্য কুমিরের অশ্রু বিসর্জন দিতো না। মুসলমানরা বুঝে যে, কথা নয়, কাজই বলে দেয় কে বা কারা মুসলমানদের প্রকৃত বন্ধু। তাই মুসলমানরা মার্কিন জোটের উইঘুরদের জন্য মায়াকান্নাকে কপটতার এক নির্লজ্জ নিদর্শন হিসেবেই দেখছেন।
লেখক: মোঃ এনামুল হাসান, বার্তা সম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত