ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ভবন থেকে লাফ দিলো দশম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

| আপডেট :  ১৩ মার্চ ২০২২, ১০:২৩  | প্রকাশিত :  ১৩ মার্চ ২০২২, ০৭:১৭

 ময়মনসিংহ করেস পন্ডেন্ট : ময়মনসিংহে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বহুতল ভবন লাফিয়ে পড়ে অর্কপ্রিয়া ধর শ্রীজা (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।
নিহত অর্কপ্রিয়া ধর শ্রীজা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার শিক্ষক স্বপন ধরের মেয়ে। সে নগরীর বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। শিক্ষক স্বপন ধর ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক।
রবিবার (১৩ মার্চ) বেলা ৪ টার দিকে নগরীর স্বদেশী বাজার ঢাকা লিটন কনফেকশনারীর সামনে থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বেলা দুইটার দিকে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ওই এলাকার বহুল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বিষয়টি  গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে, কি কারণে এমন ঘটনা৷ ঘটেছে বিষয়টি জানতে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
মৃত্যুর আগে অর্কপ্রিয়া ধর শ্রীজা নিজের ফেসবুকে ইংরেজি ও বাংলায় একটি ফেসবুক পোষ্ট দেন। যা পাঠকদের জন্য দেয়া হলো,
ফেসবুক পোষ্টের ইংরেজি টুকুর বাংলা-
আমার ভাইকে ধন্যবাদ, একটি গর্ত হওয়ার জন্য এবং আমাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার জন্য।
আমার মায়ের কাছে, ধর্ষণের জন্য ভিকটিমদের দোষারোপ করা উচিত ছিল আমার জন্য শেষ কথা, আমি আপনাকে জানতে চাই যে এটি ছিল সবচেয়ে লজ্জাজনক জিনিস যা আপনি আমাকে বলেছেন, এবং আপনার কাছ থেকে শুনে আমি জানতাম যে এটি ছিল।
যখন আমি ইতিমধ্যে ডুবে যাচ্ছিলাম সবসময় আমাকে নিচে ঠেলে রাখার জন্য ধন্যবাদ। এবং একটি বিট অনুরোধ তাই নির্দোষ অভিনয় বন্ধ, আপনি এবং আমি দুজনেই জানি আপনারা সবাই আমার সাথে কি করেছেন। উহু! আমি কি অপূর্ব মেয়ে ছিলাম! এবং আমার বাবাকে ধন্যবাদ, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে আমার জীবন নষ্ট করার জন্য। আসলে, আমি জন্মের পর থেকে। তুমি সবসময় বলেছ যে তোমার শুরু হওয়া প্রতিটি লড়াইয়ে আমি তোমাকে কিভাবে মেরে ফেলেছি।
এখন দেখুন আমরা কোথায় আছি। তুমি আমাকে মেরে ফেললে। আপনার বাকী ফু*কিং পিতৃতান্ত্রিক জীবনের জন্য শুভকামনা। মানুষের জীবন নষ্ট করতে থাকুন। কারণ এটিই আপনি সেরা। আমি মনে করি না যে আমার সবচেয়ে খারাপ শত্রুরাও আমার পরিবারের মতো আমাকে উত্যক্ত করেছে। আমি যা করেছি, আমি যা পছন্দ করেছি তা আপনার জন্য একটি বড় নো ছিল।
কখনও কখনও আমি চাই যদি আপনার কখনও বাচ্চা না হয়। কারণ আপনি সব করতে পারেন তাদের জীবন ধ্বংস. তুমি আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত আমাকে ঘরে আটকে রাখতে চেয়েছিলে। কেন? কারণ আমি একটি মেয়ে ছিলাম। আচ্ছা আপনার যদি একটা মেয়ে থাকতে এত সমস্যা হয় তাহলে আমাকে থাকার আগে আপনার ভাবা উচিত ছিল, কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ছিল বলেই কারো জীবন সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করা? ফু*কে এটা কি? আপনি যদি অনুমান না করতেন তবে আমার একটি ফু*কিং জীবন আছে।
আমি চেষ্টা করেছিলাম. আমি কয়েক বছর ধরে আপস করার এবং আমার জীবন যাপন করার চেষ্টা করেছি এই ভেবে যে একটি পালানো ছিল। হয়তো কোনো একদিন যখন আমি যথেষ্ট বড় হব। কিন্তু এখন আমি জানি। এটা শুধু একটি বিভ্রম. কিছুই অবশিষ্ট নেই যারা বলবেন আত্মহত্যার বিকল্প নেই বা আমি এখনও চেষ্টা করতে পারি, না আমি পারব না। আমি ক্লান্ত. এবং জিনিসগুলি আমাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমি নিজেকে সম্পূর্ণ রাখার জন্য আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি আর পারছি না। কোন নিস্তার নেই আমি আর এটা মোকাবেলা করতে পারেন না।
ফেসবুক পোস্টের বাংলা অংশ-
যারা বলেন বাবা মার সাথে একটু ঝগড়া হইলেই মইরা যাওয়া লাগে? গিয়ে দেখেন গা এইটা এক দিনের ঝগড়া ছিল না, কি পরিমান মানসিক চাপ দিলে একটা মানুষ মরতে যায় নিজে থেকে। আমি নিজে যতদিন ধরে ট্রাই করতেসি আমি দেখতেসি। ৩ বছর ধরে সুইসাইডাল চিন্তায় ভুইগা আমার এতদিনে সাহস হইসে। তাই, সবাইরেই ভাবসে আর সুইসাইড কইরা ফেলসে এম্নে জাজ করতে যাইয়েই না। কেও হেল্প চাইলে তো বুলি ছাড়া কিছু পারেন না।
আবার কিসু করে ফেললে তখন তার দোষ। ভিক্টিম ব্লেম ছাড়া জীবনে কিসু শিখছিলেন? যারা সুইসাইড করে তারা বাপ মা রে মাইরা করে না, বাপ মা ই  এদের সুইসাইড এর পথে ঠেইলা দেয়। আপনার মনে হয় আমার খুব ইচ্ছা ছিল মরার? বাধ্য হইসি। আপনাদের তৈরি সমাজ আর পেরেন্টিং এর কারনে। কেও মেয়েরে নিজের আলাদা লাইফ দিতে না পারলে প্লিজ মেয়ে নিয়েন না, আপনার এক ডিসিশনের জন্য একটা মানুষের জীবন নষ্ট কইরেন না।
আর এই সো কল্ড বাপ মা রে দেবতার আসন থে নামান। আপনার বাপ মা ডেভেল্পড মাইন্ডেড বা আপনার সাথে পারস্পেক্টিভ মিলে দেইখা সবারটা এক না। সবাইরে নিজেরে  দিয়া জাজ করা বন্ধ করেন। আই নো অনেকে বলবেন এর থেও বড় প্রব্লেম থাকে মানুষের লাইফ এ। মানুষ তাও বাইচা থাকে। বাট ওদের প্রব্লেম আর আমার প্রব্লেম এক না দেইখাই যে ওদের টা প্রব্লেমের পর্যায়ে পরে আর আমার টা পরে না এটা তো কথা না।
আমার মানসিক, পারিবারিক অবস্থা ওর সাথে যেমন মিলবে না আমার রিয়েকশনও ওর সাথে মিলবে না। আমার জন্য সুইসাইড ই একমাত্র উপায় ছিল। সব মুহুর্তে শেষ হয়ে যাবে। ফাইট যে করি নাই তা না, চার বছর ধরে করসি। এখন আর পারতেসিনা। সব ট্রাওমা এখন ফিজিক্যাল রিয়েকশন শুরু করসে। এখন আর সম্ভব না। আর অপশন নাই।  আমার ফ্রেন্ড দের বলতেসি, থ্যাংক্স আ লট। তোদের জন্যই এতদিন বাচতে পারসি। এত্ত এত্ত হেল্প করার জন্য থ্যাংক্স। অনেক ভালোবাসি তোদের। পাওনা রইল অনেক কিছু। ভালো থাকিস।
ট্রাই করিস তোদের সময়ে এই টক্সিক পেরেন্টিং দূর করতে। আর আবারও বলতেসি আমি যা ট্রাওমা ভোগ করসি এগ্লা একদিনের না। দিনের পর দিন মানসিক নির্যাতন সহ্য করার পরে এই ডিসিশন নিসি। সেই ক্লাস সিক্স থেকে। আর তার আগে তো ভালো করে বুঝি ই নাই। যাই হোক জানি তার পরও কেউ চেঞ্জ হবেন না।
সেই ভিক্টিম ব্লেম ই করে যাবেন। আর আমার পেরেন্ট কেউ এই পোস্ট দেখে থাকলে আর আমার জমানো টাকা গুলা খুইজা পাইলে অনু রে দিয়, নিজে তো দেখসি আমার সাথে কি করস, মেয়ে হওয়ার দোহায় দিয়া সব রাইট কাইরা নিস, সুতরাং ও বড় হইলে ওর লাগতে পারে। আশা করি আমি ছোট থাকতে যা টাকা পাইসিলাম বা জমাইসি তার মত মাইরা দিবা না। আর আমার ভাইরে তো কিসু বলার ই নাই। সেম জেনারেশনে থাইকাও কেম্নে আমারে হ্যারাস কইরা গেল জানিনা।
জানার ইচ্ছাও নাই। আর কেয়ার করতে পারব না। আমার সাথে যা করসো সবাই আশা করি হাজার গুনে কারমা হিসেবে ফেরত পাও। আর না বোঝার ভান কইর না। আমি ১৬ বছর থেকেই বুঝতে  শিখলে তোমাদের জন্য ৪০ বছরে বোঝা কোনো ব্যাপার ই না। তার পরও চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝায়ে দেওয়ার চেষ্টা করসি। শুনো নাই, খালি লোকে কি বলবে ভাইবা গেসো। এখন থাকো গিল্ট নিয়া। এখন দেখো লোকে কি বলে দেখ আর রিগ্রেট কর। এগ্লাই তোমাদের পাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত