যুক্তরাষ্ট্রে ‘খলনায়ক’ থেকে বীরের তকমা জেলেনস্কির
মাত্র তিন বছর আগেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রে একজন খলনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়।
সেই সূত্র ধরে দেশটির সিনেটে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, ব্যক্তিগত কাজ হাসিলের জন্য তিনি তার প্রেসিডেন্ট পদ ব্যবহার করেছেন। কাজ হাসিলের ওই কর্মকাণ্ডে তার বিদেশি দোসর ছিলেন আজকের জেলেনস্কি। সে সময় তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েছেন মাত্র। ঘটনার আবর্তে মাত্র তিন বছর বাদে সেই জেলেনস্কি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভাষণ দেন।
গত বুধবার কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে সংবর্ধনা জানান। কংগ্রেস থেকে তাকে ‘বীর’ উপাধি দেওয়া হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র হয়ে মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দেশগুলোর দাবার ঘুঁটি হয়ে ময়দানে লড়ছেন তিনি। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই ফোনালাপে শোনা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করেন ট্রাম্প। যার জের ধরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহায়তাও আটকে দেন তিনি। তখন ইউক্রেনের এনার্জি সংস্থার বোর্ডে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন কাজ করতেন।
ফোনালাপ ফাঁসের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে। পরে এক মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন।
ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প বিদেশি হস্তক্ষেপের জন্য হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। ট্রাম্প তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে নিচে নামিয়েছেন। নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশের জাতীয় সুরক্ষা হুমকির মুখে ফেলেছেন।
ওই ঘটনার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে। এর পর ওই বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন সংসদের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। ওই ঘটনায় জেলেনস্কিও সমানভাবে সমালোচিত হন।
তবে তিন বছর পরই পুরো চিত্রনাট্য বদলে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সূত্র ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সহযোগী হিসেবে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছেন। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভার্চুয়ালি ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
এ সময় জেলেনস্কি ইউক্রেনের পাশে থাকার জন্য মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বিশ্বনেতার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। ভাষণে ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষায় আরও সাহায্যের জন্য মরিয়া আবেদন জানান জেলেনস্কি। রাশিয়ার বিমান হামলার মুখে ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি আবারও ‘নো-ফ্লাই জোন’ প্রতিষ্ঠার পুরোনো আর্জি জানান।
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ভয়াবহ বিমান হামলার জবাব দেওয়া এবং নো-ফ্লাই জোন আরোপ করার অনুরোধ জানাচ্ছে ইউক্রেন। রাশিয়া শুধু আমাদের দেশেই আক্রমণ করেনি, তারা আমাদের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে আক্রমণ করে চলেছে।’ যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে যে সহায়তা করেছে, সেজন্য জেলেনস্কি তার কংগ্রেসের ভাষণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তবে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও সহায়তা দরকার।’ এ সময় আমেরিকান সব কোম্পানিকে রাশিয়ার বাজার অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘তাদের বাজার ছেড়ে দিন। কারণ, তারা আমাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।’ রাশিয়ার আরও যেসব ফার্ম আছে, সেগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যও মার্কিন আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানান তিনি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিয়েভকে এখন পর্যন্ত সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তাসহ অন্যান্য আরও সহযোগিতার জোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত