ভাসানচরে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সামনে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ
কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সোমবার সেখানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে।
প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধিদল সোমবার নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পরিদর্শনের জন্য গিয়েছিল। খবর বিবিসির।
তারা সেখানে পৌঁছানোর পর পরই রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করে। পরে একপর্যায়ে কিছু ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তাসহ প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে গিয়েছিল।
দলটিতে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা ছিলেন। এই প্রথমবার ইউএনএইচসিআরের কোনো প্রতিনিধিদল ভাসানচরে গেছে।
দলটিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি নামার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের একটি দল মিছিল করে হেলিকপ্টারটির দিকে এগোতে শুরু করে।
সে সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ভাসানচরে ওয়্যার হাউস নামে একটি ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে ইটপাটকেল দিয়ে ভবনটির কিছু জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। সে সময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১৯ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ভাসানচরে বাস করছেন এ রকম কয়েকজন রোহিঙ্গা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘের যে প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গারা কথা বলতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু ভাসানচরে অবস্থানরত প্রায় ১৯ হাজারের মতো রোহিঙ্গার মধ্যে থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু তাদেরই কথা বলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অনেকেই যে আর থাকতে চান না, সেখানে তাদের নানাবিধ অসুবিধার পুরো চিত্র ফোকাল পয়েন্টের সদস্যরা তুলে ধরেন না; কারণ তারা নিয়োগপ্রাপ্ত।
এ কারণে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের আসল অবস্থা কী, সেই বার্তা পৌঁছবে না এমন আশঙ্কা থেকে তারা চেয়েছিলেন শুধু ফোকাল পয়েন্ট নয়, অন্যদেরও কথা বলতে দেওয়া হোক।
কথা বলার সুযোগ না পেয়ে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
একটি অংশ ভাঙচুর করার পর ওখানে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, এখন ভাসানচরের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে কয়েক দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে স্থানান্তর করা হয়।
তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে।
তবে রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছেন, সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি তাদের দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সব পূরণ করা হয়নি।
তাদের মাসিক ভাতা, প্রতিটি পরিবারকে গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, যা সবাইকে দেওয়া হয়নি বলে রোহিঙ্গারা দাবি করছেন।
সেখানে শিশুদের পড়াশোনার জন্য কোনো স্কুল তৈরি করা হয়নি। তাদের প্রতি মাসের খাওয়ার যে রসদ দেওয়া হয়, তা ন্যূনতম কিছু সামগ্রী বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা।
তাদের কক্সবাজারে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে রোহিঙ্গারা দাবি করেছেন। কিন্তু শুধু চরেই তাদের অবস্থান করতে হয়।
এ ছাড়া খারাপ আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মধ্যেই। ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খুব নিচু চরটিতে প্রায়শই পানি প্রবেশ করে, যা ঠেকানোর জন্য যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তার একটি ভেঙে গেছে বলেও জানা গেছে।
এখন রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন যে, সামনে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে, কোনো সাইক্লোন শুরু হলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে।
এসব আশঙ্কা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ফিরে যেতে চান। ইতোমধ্যে ভাসানচর থেকে কিছু রোহিঙ্গার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত