তাইওয়ান প্রণালিতে চীনা সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগ ভারতের
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের ‘সামরিকীকরণ’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। রবিবার শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে এমন উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার বন্দরে চীনের একটি সামরিক জাহাজ নোঙরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বাদানুবাদের মধ্যেই দিল্লির তরফে এমন উদ্বেগ জানানো হলো। তাইওয়ান ইস্যুতে দিল্লির তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন প্রতিক্রিয়া এটিই প্রথম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
চীনের সঙ্গে ভারতের নিজেরও সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কও খুব একটা সুখকর নয়। ২০২০ সালের জুনে হিমালয়ের পাদদেশে দুর্গম এলাকায় দুই দেশের সীমান্ত বিভাজনকারী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) সংঘাতে জড়ায় উভয় দেশের সেনারা। ওই সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ জন এবং চীনের চার সেনা নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এ নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করে বেইজিং ও দিল্লি। উত্তেজনা প্রশমনে পরে দফায় দফায় আলোচনায় বসে উভয় পক্ষ।
ভারতের উদ্বেগ উপেক্ষা করে চলতি আগস্ট মাসের গোড়ার দিকে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙ্গর করে চীনা গবেষণা জাহাজ ইউয়ান ওয়াং ৫। বন্দরটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসীমায় কোনও গবেষণা চালানো যাবে না এমন শর্তে জাহাজটিকে সেখানে নোঙ্গরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও ভারত আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে বলে আসছে, তাদের কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে জাহাজটি ব্যবহার করবে বেইজিং।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের অত্যাধুনিক প্রজন্মের জাহাজগুলোর একটি ইউয়ান ওয়াং ৫। এটি স্যাটেলাইট, রকেট পর্যবেক্ষণ এবং আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে ব্যবহার করা হয়। আর এটি পরিচালনা করে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জাহাজটিকে ‘দ্বৈত-ব্যবহারের গুপ্তচর জাহাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে সমুদ্র পরিবহন বিশ্লেষণকারী একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এটি একটি গবেষণা ও জরিপ জাহাজ।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাজটির সফর নিয়ে শ্রীলঙ্কার সরকারের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাহাজটিকে দেশটির বন্দরে পাঠানো থেকে বিরত থাকতেও চীনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। জবাবে বেইজিং জানায়, “কোনও নির্দিষ্ট দেশের জন্য শ্রীলঙ্কাকে চাপ দেওয়ার জন্য কথিত ‘নিরাপত্তা উদ্বেগের’ বরাত দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।” তবে তারা কোনও নির্দিষ্ট কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেনি। পরে শ্রীলঙ্কা এক ঘোষণায় জানায় তারা জাহাজটিকে নোঙ্গরের অনুমতি দেবে। সেই অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত জাহাজটি লঙ্কান বন্দরে নোঙ্গর করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, জাহাজটি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সামুদ্রিক গবেষণা পরিচালনা করছে। এটি কোনও দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রভাবিত করবে না। কলম্বোয় নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের তরফে এ ইস্যুতে ভারতের কথিত নিরাপত্তা উদ্বেগের সমালোচনা করা হয়। দিল্লির বিরুদ্ধে ‘শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের’ও অভিযোগ তোলে বেইজিং।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওয়েন-টি সুং। চীন ও তাইওয়ান বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ বলেন, চীনকে তাইওয়ান প্রণালীর সামরিকীকরণের জন্য অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে নতুন দর কষাকষির ক্ষেত্রে তৈরি করছে দিল্লি। তার মতে, চীন যে একসঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে অগ্রসর হতে চায় না সেটি জানা আছে দিল্লির। ফলে চীনের জন্য তাইওয়ান ইস্যুটি নতুন করে সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে ভারত কিছুটা সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত