পর্যটন শিল্প এগিয়ে নিতে ধুনটের সাগরের কিছু কথা!
পর্যটন শিল্পে তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরনার নাম শহিদুল ইসলাম সাগর। বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের নছরতপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে তার জন্ম। যদিও শহিদুল ইসলাম সাগর,সর্বজনীন সাগর নামেই অধিক পরিচিত। তিনি তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। কৃষক আন্দোলনের নেতা বাবা’র হাত ধরে গ্রামীণ পরিবেশের জল,কাঁদায় বেড়ে ওঠে তার শৈশব ও কৈশোর সময়। পারিবারিক স্কুল পাচথুপি নছরতপুর জাহের আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ১৯৯৬ সালে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জ এর পঞ্চবটীতে।
তারপর নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করার পর, ঢাকার বনানীতে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এরপর জড়িয়ে পড়েন প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনে ১৯৯৯ সালে করাইলে মওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী স্মৃতি পাঠাগারে। তিনি ও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে করছেন। প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার সজল রায় চৌধুরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস,এস আর্কিটেক্ট এ কর্মরত থাকলেও,পরে রং তুলি নামক নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ২০১২ সালে হটাৎ করেই চালু করেন ট্রাভেল এজেন্সি তৈরি করে জনশক্তি রপ্তানির সাথে যুক্ত হন।
সে বছরই আব্দুল্লাহ হারুন সাহেব, এর অনুপ্রেরণায় যুক্ত হন পর্যটন শিল্পের সাথে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম বগুড়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। ইনবাউন্ড ও ডোমেস্টিক ট্যুর পরিচালনা তার শখের বিষয়। ২০১৫ সালে হটাৎ করে তিনি জড়িয়ে পরেন “পর্যটন ও প্রত্নতাত্ত্বিক” বিষয় নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক গবেষণায়। ২০১৫ সালের ১৫ই নভেম্বর “বগুড়া ট্যুরিস্ট ক্লাব” গঠন করে ৬০ সপ্তাহব্যাপী পর্যটন শিল্পের প্রচার, প্রসার ও গবেষণা করে ক্লাবের পক্ষ থেকে বগুড়া জেলার ১১৪ টি পর্যটন স্পটের তালিকা প্রকাশ করেন। বর্তমানে শহিদুল ইসলাম সাগর, বগুড়া ট্যুরিস্ট ক্লাব এর সভাপতিত্ব করছেন।
সে সময় বগুড়ার তরুণদের দিয়ে বগুড়া এডভেঞ্চার ক্লাব, বগুড়া সাইকেলিষ্ট ক্লাব,পুণ্ড্র থিয়েটার,বগুড়া ইয়থ পাওয়ার’সহ নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে,সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য বাদ দিয়ে টানা প্রায় দেড় বছর থাকতে হয় বগুড়াতে। আর যে কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর ২০১৭ সালে পর্যটন ভিত্তিক বাংলা সংবাদপত্র “দি ট্যুরিজম ভয়েজ” প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্যবসার পাশাপাশি পর্যটন সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি “দি ট্যুরিজম ভয়েজ”সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বেহাল দশা নিয়ে যে এ্যাসোসিয়েশন গুলোর সরব থাকার কথা, তারা যখন সেগুলো বাদ দিয়ে চেয়ারে বসার জন্য নিজেদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ল। ঠিক তখনই এদেশের তরুণ পর্যটন ব্যবসায়ী,গবেষক, সাংবাদিক ও পর্যটন পেশাজীবীদের নিয়ে ২০১৯ সালে গঠন করেন, “বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিইএ)”। তিনি বর্তমানে বিটিইএ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। অল্প দিনেই তার গতিশীল কর্মকাণ্ডে বিটিইএ আজ সর্বজনীন প্রশংসিত সংগঠন। ২০২০ সালে করোনা মহামারীতে যখন পর্যটন পেশাজীবীরা হতাশ, সে সময়ে ৬ দফা দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে জাতীয় এবং আঞ্চলিক বেশ কয়েকটি সংগঠন নিয়ে গঠন করেন,“সম্মিলিত পর্যটন জোট”। যার কোয়াডিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন সাগর। সম্মিলিত পর্যটন জোট এর আন্দোলনের অন্যতম সাফল্য পর্যটন শিল্পকে সমবায়ে যুক্ত করা এবং এসএমই’তে পঞ্চম অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্তি করা।
দেশের টুরিস্ট গাইডরা যখন অবহেলিত তখন সকলের অনুরোধে, বাংলাদেশ টুরিস্ট গাইড এ্যাসোসিয়েশন (বিটিজিএ)গঠন করেন। যা গাইডদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে অবিরত। অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করা এই মানুষটি’কে কেউ কেউ পর্যটন গুরু বলেও সম্মন্ধন করেন। করোনা মহামারীর সময়ে যখন তরুণ ট্যুর অপারেটর’রা অফিস হারিয়েছে, তখন শহিদুল ইসলাম সাগর এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান “ই-ট্যুরিজম কনসোর্টিয়াম” সকলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। এছাড়া পর্যটন প্রেমী এই মানুষটি “বাংলাদেশ ট্যুরিজ্ম রিসার্চ ইন্সটিটিউট” এর উপদেষ্টা, ট্যুরিজ্ম ডেভলোপার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ( টিডাব) এর পরিচালক,লিগ্যাল এ্যাফেয়ার্স,ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (টোয়াব) এর জেনারেল মেম্বার,অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)এর জেনারেল মেম্বার হিসাবে যুক্ত আছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শুরু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু ট্যুরিজম অলিম্পিয়াড এর পরিকল্পনাকারীও সাগর। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮৬ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শুরু হওয়া এই মেগা ইভেন্ট টি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। সাগরের এই ইভেন্টটি বাস্তবায়নে থাকছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স এসোসিয়েশন বিটিইএ। ইতিমধ্যেই গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সহ অসংখ্য গুনিজন অলিম্পিয়াড সফল করতে বানী সহ শুভ কামনা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সদ্য চালু হতে যাওয়া বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প ভিত্তিক বিশেষায়িত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘ট্যুরিজম টিভি বাংলাদেশ’ একজন অংশীজন শহিদুল ইসলাম সাগর।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত