মায়েদের জন্য উপদেশ: আপনার সন্তানের স্কুলব্যাগ চেক করুন
আম্মাজানদের জন্য একটা উপদেশ। বাচ্চাকে স্কুলে দেয়ার দিন থেকেই বাচ্চা বাসায় ফিরে এলে, তাদের ব্যাগ চেক করে দেখবেন মাঝে মাঝেই প্লিজ। ব্যাগে কয়টি রাবার পেন্সিল, শার্পনার ছিল আর অতিরিক্তটা কোথায় কিভাবে পেল সে? আদর করেই জিজ্ঞাস করবেন এবং সবসময় বলবেন, না বলে কারো জিনিসে হাত দিতে হয় না, নিতে হয় না। সেটাকে চুরি বলে। এটা মহাপাপ।।
অতিরিক্ত রাবার পেন্সিল কলম, বাচ্চার ব্যাগে পেয়ে আনন্দিত হবেন না আবার। বাহ! বাচ্চা এই বয়সেই কামাই শুরু করে দিয়েছে!! সাশ্রয় করে দিচ্ছে বাবা মায়ের। অনেকের চুরির হাতে খড়ি সেই রাবার পেন্সিল, কলম দিয়েই শুরু হয়, পরে তা মহাসাগরে গিয়ে শেষ হয়। অনেকের আবার আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংক দিয়ে। ছাত্র অবস্থায় সন্তানের কাছে অযৌক্তিক পরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে, খোঁজ নিন টাকার উৎস কি। কোথায় কিভাবে পেল এত টাকা।
ছেলের হাতের প্রচুর টাকা পেয়ে খুশিতে গদগদ মাকে কপাল চাপড়াতে হয়েছে শেষে। দেখা গেল ছেলে অস্ত্র, মাদক বা চাঁদাবাজি মামলার আসামী। এবার আব্বাজানদের নিয়ে একটি গল্প। ছেলে প্রতিদিন স্কুল থেকে অন্যের খাতা পেন্সিল, কাগজ কলম চুরি করে বাসায় নিয়ে যায়। টিচার প্রতিদিন ক্লাসে বকাঝকা এবং বেতের বাড়ি দিয়েও ঠিক করতে পারলেন না। অবশেষে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ দিলেন।
প্রধান শিক্ষকও কতক্ষণ ঝাড়লেন বেত দিয়ে, তারপর ছেলের বাবাকে স্কুলে ডেকে ছেলের চুরির বিষয়ে বিস্তর শোনালেন। বাবা এটা শুনে পাশে রাখা বেত নিয়ে পেটাতে লাগলেন আর রাগে গজগজ করতে বললেন, ‘বদমাইশ ছেলে, কেন তুই এগুলো চুরি করিস!! আমি যে প্রতিদিন অফিস থেকে তোকে কাগজ কলম পেন্সিল এনে দেই, সেগুলো কি করিস’।
সোনার বাংলায় সোনা ফলাতে হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একেবারে নতুন কুঁড়ি অবস্থায় ধরতে হবে। আমরা কয়টি স্কুলে বা বাসায় কয়টি বাচ্চাকে শিখিয়েছি বা শেখাচ্ছি, কিভাবে রাস্তা পার হতে হয়, কিভাবে বাসে ট্রেনে চলতে হয়, ভদ্রতা-নম্রতা, শালীনতা কি, একতা কি, সিনিয়রদের কিভাবে সন্মান জানাতে হয়, কোথায় ময়লা, থুথু ফেলতে হয়, কিভাবে টয়লেট করতে হয়, কেন সত্য ছাড়া মিথ্যা যাবে না, কি ছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের অবদান আর ইতিহাস।
বাচ্চাদের কথা বাদ দেই। উচ্চ মাধ্যমিকের কয়টি ছেলে-মেয়ের চোখ ভেজাতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী বলে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের। অনেক স্বপ্ন ছিল এই দেশকে নিয়ে। অনেক স্বপ্ন দেখি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোরে রংপুর ঢাকা মহাসড়কে মিঠাপুকুর উপজেলার কাছে পাক হানাদারদের ভেঙ্গে ফেলা দমদমার ব্রিজে বিজয়ীর বেশে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার দিয়ে তাদের কাঁধের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া বাচ্চা ছেলেটি সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিল, তাদের স্বপ্ন পূরণ করবেই সে। হাজার কষ্ট আর বেদনায়ও হাসিমুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে যাবে। বেঈমান হবে না কোনোদিন।
তাদের গায়ের সেই পবিত্র উষ্ণতা এখনো অনুভব করি। শুনতে পাই এখনো তাদের বিজয়োল্লাস। ‘দেশ স্বাধীন না করে ঘরে ফিরবে না তোমরা। আমার মাকে খবর দিও, আমি কথা রেখেছি। জীবন দিয়েছি দেশের জন্য’….. মৃত্যুর পূর্বে সাথী যোদ্ধাদের হাত চেপে ধরে এই কথা বলা শহীদের হাতের স্পর্শ পাই আমি হাতের মুঠোয়। কিছুতেই ছাড়ে না যে তারা হাত আমার।
গ্রামের এক বাড়ির আশি বছরের বৃদ্ধা মাতাকে, বাড়িতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান দেয়ার জন্য পিটিয়ে আধমরা করে ফেলে চলে যায় পাক হায়েনারা। তবুও পাশের ধান ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা যোদ্ধাদের খবর দেয়নি মা। তাদের হাত ধরে মৃত্যুর আগে বলে যায় অচেনা সেই মা, ‘তোরা আমার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা কর, স্বাধীন করেই ঘরে ফিরবি। এটাই তোদের বাড়ি। আমি ছিলাম তোদের মা। বারবার তোরা ফিরে আসবি এই বাড়িতে’।
দেশ স্বাধীন হবার পর, গাইবান্ধার কোনো এক গ্রামের সেই বাড়িতে যায় ঐ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। খাঁখাঁ করছে সব। কোনো বাড়ি ঘর নেই। ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে ভর্তি। জানতে পারে, সেখানেই ছিল বাড়ি। সেই মৃত বৃদ্ধা মায়ের একমাত্র সন্তান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল বলে পাক হানাদার বাহিনী ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের খোঁজ আর কেউ পায়নি।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এরপর কয়েকবার গিয়েছিলেন সেখানে। কাশবন, ঝোপঝাড় আর বাঁশঝাড়ের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উদাসী বাতাসে প্রতিবার অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন শত্রুর ত্রাস বীর কমান্ডার। আমি যেদিকেই তাকাই, দেখতে পাই সেই মায়ের বিরানভূমি। কাশবন, ঝোপঝাড় আর বাঁশবাগান, বয়ে যাওয়া তীব্র বাতাসের হাহাকার। কোথাও কেউ নেই। নিরব নিথর সব। হে আমাদের সন্তানেরা, ধরবে আমার হাত? যাবে সেই নিথুয়া পাথারে? শুনবে বাতাসের হাহাকার? কাঁদবে অঝোর ধারায়? বলবে, ভেবোনা গো মা, তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে….। মাহবুব কবির মিলনের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত