মালয়েশিয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপনের সিন্ডিকেট, ভিসা বাণিজ্যের নামে হাজার কোটি টাকা পাচার
বাংলাদেশিদের জন্য অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। তবে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না পেয়ে বন্দিদশা কিংবা দেশে ফেরত আসার মতো ঘটনা কম নয়। অপরদিকে চলতি বছরের মে মাস থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেশটি।
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জানান, তারা ২ মাস ধরে কর্মহীনভাবে রয়েছেন। থাকার মত জায়গা পাচ্ছেন না। প্রতিদিন সকালে প্রায় ৩৬ জন ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে তবে কাজ পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, তাদের যারা পাঠিয়েছে তারা কোনো কাজ দেয়ার মত কেউ না। মালয়েশিয়ায় গিয়ে কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে জীবন চালাচ্ছে।
এর নেপথ্যে দায়ী করা হচ্ছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিয়মকেই। অভিযোগ আছে, ২৬শ’ রিক্রুটিং এজেন্সি থাকলেও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন। যিনি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক। গত ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা বদলে মালশিয়ার কর্মী পাঠাতে জন প্রতি নিতে ৪ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফকরুল ইসলাম বলেন, ২৫ জন প্রথমে ব্যবসা করেছে। পরে তারা আর ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু বাকি যারা প্রায় ২৪শ’ আছে তারা কিন্তু ব্যবসার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া কর্মীদের অতিরিক্ত টাকাও খরচ করেছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠনের নেতাদের অনেকেই জানান, কর্মী পাঠাতে নিবন্ধন করানো হতো মাইগ্রাম নামে মালয়েশিয়ার একটি সফটওয়্যারে। যেটি নিয়ন্ত্রণ করে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিন নূর।
ফকরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন সাপোর্টের পরিবর্তে এটি পুরো জনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতো। এপ্রুভাল ও মেডিকেলসহ সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সুতরাং সিন্ডিকেট করার জন্য মূলত যারা দায়ী তারা হচ্ছেন আমিন নূর এবং রুহুল আমিন স্বপন।
২০১৬ এবং ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধে।
সাউথব্রিজ করপোরেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুর রউফ বলেন, রুহুল আমিনকে জনপ্রতি ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা নেয়ার জন্য কে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তো তাকে টাকা পাচার করার জন্য নিয়োগ দেয়নি।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান এ বিষয়ে বলছেন, জবাবদিহিতা না থাকায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নৈরাজ্য থামছে না। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেখা যায়- মালয়েশিয়ার রেগুলেটর অথরিটি, বাংলাদশে সরকার, বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় যেনো অন্ধ থাকে।
বাংলাদেশ থেকে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দেড় বছরে ১শ’ এজেন্সির প্রায় ৫ লাখ কর্মীর ছাড়পত্র নেয়া হয়। ওই সময়ে মালয়েশিয়ায় গেছে পৌনে ৫ লাখ কর্মী।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত