বিপর্যস্ত ছিলেন ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান, নেয়া হয়েছে থানায়
নিখোঁজের আটদিন পর রংপুরে নিজ বাসায় ফিরেছেন ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মাদ আদনান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর কে বা কারা তাকে রংপুর মহানগরীর মাস্টার পাড়ায় আবহাওয়া অফিসের পেছনে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আদনানের পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে আদনানের মামা আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জুমার নামাজের পরপর আদনানের প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি রংপুর নগরীর মাস্টার পাড়ায় আদনানকে পৌঁছে দিয়ে গেছে কিছু লোক। এমনটাই ওই বাড়ি থেকে তাকে জানানো হয়েছে।
বাড়িতে ফেরার পর তাকে বিপর্যস্ত লাগছিল বলে জানান এক প্রর্তক্ষ্যদর্শী। এসময় তিনি শুধু পানি পান করার সময় পান। কিছুক্ষনের মধ্যে জিজ্ঞাষাবাদের জন্য পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যান। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আবু ত্ব-হাকে পাওয়া গেছে। তিনি উদ্ধার হয়েছেন। এই মুহূর্তে এইটুকু তথ্য আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত দ্রুত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানানো হবে।
পরিবারের ভাষ্য মতে- গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দিনগত রাতে রংপুর থেকে ঢাকার ফেরার পথে রাজধানীর গাবতলী পৌঁছানো মাত্র ত্ব-হা তার গাড়ির চালক মো. আমির, সফরসঙ্গী মো. মুহিদসহ মোট ৪ জন নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সারা দেশেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ত্ব-হাকে ফিরে পেতে তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভক্তরা বিভিন্ন পোস্ট দেন। যেখানে বারবারই তাকে ফিরে পেতে দাবি জানানো হচ্ছিলো।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ত্ব-হার স্ত্রী সাবেকুন নাহার। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যদি কোন অন্যায় করে থাকেন তাহলে তাকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করা হোক। সে নিখোঁজ কেন? আমি শুধু তার সন্ধান চাই। তাকে যদি আমার কাছে এনে দিতে না পারেন তাহলে আমাকে তার কাছে নিয়ে যান। আমি একজন স্ত্রী হিসেবে জানি না আমার স্বামী কোথায়। আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে মিনতি করতেছি আপনারা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন। এর বেশি কিছু চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী রংপুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন বগুড়ার উদ্দেশ্যে। সেখানে তার একটা প্রোগ্রাম ছিলো। কোনও কারণে সেই প্রোগ্রাম না হলে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে মোবাইল ফোনে তিনি (ত্ব-হা) আমাকে জানিয়েছিলেন দুইটি বাইক তাদের বহন করা কারটি অনুসরণ করছিলো। শেষ পর্যন্ত আমাকে তিনি তার গুগল ম্যাপ শেয়ার করেছিলেন সেখানে আমি জানতে পেরেছি মিরপুরের আমার বাসা থেকে তিনি আর ১৭ মিনিটের দূরত্বে আছেন। তখন সময় ছিল রাত ২টা ৩৭ মিনিটের কাছাকাছি।’
ত্ব-হার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসাইন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একটি গাড়ি ও ৪ জনকে মানুষকে এক সঙ্গে এভাবে গায়েব করে দেওয়া কোন প্রাইভেট সংঘের কাজ হতে পারে বলে আমরা মনে করি না। এখানে কোন সংস্থা বা অন্যকোন মানুষ জড়িত আছে বলে মনে করি।’
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৫ জুন) সাবেকুন নাহার স্বামীকে ফিরে পেতে পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং র্যাবের মহাপরিচালক বরাবরও দুটি চিঠি দেন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, রংপুর থেকে গাবতলী আসার পর তিনি তার কয়েকজন সঙ্গীসহ নিখোঁজ হন।
এছাড়াও স্বামীকে ফিরে পেতে আবু ত্ব-হার স্ত্রী সাবেকুন নাহার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সাবেকুন নাহার প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারও সহযোগিতা না পেয়ে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) বরাবর শেষ আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনাকে মা ও আমার অভিভাবক মেনে আমার দু’হাত জোড় করে আমার স্বামী নিখোঁজ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছি।’
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ত্ব-হা’র সঙ্গে আরও ৩ জন নিখোঁজের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে রংপুরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
এদিকে নিখোঁজ আবু ত্ব-হা আদনানের সন্ধান চেয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে। গত সোমবার (১৪ জুন) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়ার ভেরিফায়েড টুইটার থেকে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
নিখোঁজ হওয়া তরুণ ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান এর সন্ধান চেয়ে এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় মুফাসসির মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। বুধবার (১৬ জুন) রাতে তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এ স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। এরপরই স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিজানুর রহমান আজহারী লেখেন, ‘এক সপ্তাহ হয়ে গেল। একজন তরুণ দ্বা’য়ী তার দুজন সফরসঙ্গী এবং ড্রাইভার সহ বিলকুল গায়েব। কী আজিব ঘটনা! এমনকি গাড়ীটারও সন্ধান কেউ দিতে পারছেনা। ব্যাপারটা বেশ রহস্যজনক এবং উদ্বেগের। তাদের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনাও যেন- ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘গুম একটি মানবতাবিরোধি অপরাধ। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম ও নৃশংসতম অপরাধগুলোর অন্যতম। গুম-সংস্কৃতি চূড়ান্তভাবে আইনের শাসনকে বিপন্ন করে তোলে এবং একটি রাষ্ট্রকে অকার্যকর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। গুমের মিছিল এভাবে লম্বা হতে থাকলে, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ণ হবে। তাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত— প্রতিটি গুমের ঘটনার দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা।’
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত