গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক

| আপডেট :  ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪১  | প্রকাশিত :  ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৯

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়, যা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে নিজেদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেছে।

জনগণের ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে এই সরকার দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার যে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক নীতি থাকা উচিত, সেটি সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করেছে ইউনুস সরকার। নির্বাচনের আগেই হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গণমাধ্যমে কড়া সেন্সরশিপ আরোপ করে সরকার তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড আড়াল করতে চেয়েছে।

এমনকি, বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ তুলে ধরতে না পারে। শেখ হাসিনার শাসনামলে অন্ততপক্ষে একটি প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল, যেখানে বিরোধী দল আন্দোলন, নির্বাচনী প্রচারণা এবং গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারত।

তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে জনগণের ভোটাধিকার সংরক্ষিত থাকে। তার সরকার উন্নয়নের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিও ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইউনুস সরকার সেই ধারা সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে।

বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করতে হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশে আরেকটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে দেশের জনগণ কঠিন সময় পার করছে, কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থামবে না। ইতিহাস সাক্ষী, জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরাচারই টিকে থাকতে পারেনি। ইউনুস সরকারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী ইউনুস সরকার। তাদের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থ লুটপাটের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিপতিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, বিনিয়োগের অভাব এবং লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।

ইউনুস সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব চলছে। সরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বড় বড় প্রকল্পের নামে সরকারি তহবিল লুট করে জনগণকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত করা হয়েছে।

সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। চাল, ডাল, তেল, গ্যাসসহ সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট, অথচ তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিজেদের সিন্ডিকেটকে লাভবান করছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বর্তমান সরকারকে বিশ্বাস করে না, ফলে বিনিয়োগ কমে গেছে।

নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে। শিল্প কারখানাগুলো ধ্বংসের মুখে, যার ফলে তরুণ সমাজ হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার দেশকে বিদেশি ঋণের ফাঁদে ফেলে দেউলিয়া করে দিয়েছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা লুটপাট করা হয়েছে। ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই দেশের বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা বৃদ্ধি করেছে।

বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারের পতন ঘটানো জরুরি। অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক সরকার, যা জনগণের কল্যাণে কাজ করবে।

মাসুদ মিয়া
লেখক ও লন্ডন প্রবাসী

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত