জুলাই শহীদের কন্যাকে গণধর্ষণের মূল হোতা কথিত প্রেমিক ধরাছোঁয়ার বাইরে

দুমকি(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দুমকির আলোচিত জুলাই বিপ্লবে শহীদ কন্যা ধর্ষণ ঘটনার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে ধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা মেয়েটির কথিত প্রেমিক ইমরান মুন্সি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার দিন থেকেই সে পলাতক রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ভুক্তভোগী ওই মেয়েটির সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তাঁর সহপাঠী স্থানীয় মালেক মুন্সির ছেলে ইমারান মুন্সির সাথে।এলাকাবাসীর ভাষ্য উক্ত ঘটনার আগেও একাধিকবার ইমরান মুন্সির সাথে ওই মেয়েটিকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে ধরেছে এলাকাবাসী। ঘটনার একমাস আগে ইমরানের সাথে ওই মেয়েকে তাঁর বসতঘরের পিছন থেকে (নানা বাড়িতে) আটক করে স্থানীয়রা। সেদিন রাতে ইমরানের বাবা মালেক মুন্সি ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছেন।ইমরানের বাবার স্বীকারোক্তিতেও তা জানা গেছে।
স্থানীয় বায়েজিদ হোসেন জানান, ঘটনার দুইদিন আগেও ইমরান ওই মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন মুন্সিবাড়ি সংলগ্ন একটি বাগানভিটায় যা সাকিব মুন্সি দেখে তাদেরকে জানিয়েছেন। ঘটনার দিনও ইমরান ওই মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে তা সাকিব ও সিফাত দেখে ফেলে। মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাস্থল থেকে দু’শো গজ দুরে তিনদিকে বসতবাড়ি থাকলেও উল্লেখিত ঘটনার কোন সাড়াশব্দ পাননি কেউ।ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বাড়ির মালিক ফজলুল হক আকন জানান, তিনি রাত আটটার পরে তারাবীর নামাজ পড়তে যান। রাত আটটা পর্যন্ত তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তিনি কোন ডাকচিৎকার কিংবা কোন সাড়াশব্দ পাননি।এমনকি রাতেও উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে কিছুই শুনেননি।পরের দিন বুধবার ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তিনি জানতে পারেন।
ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বাড়ির মালিক হারুন হাওলাদার জানান, উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে ওই রাতে তারা কিছুই জানেন না। কোন ডাকচিৎকার বা কোন সাড়াশব্দও শুনতে পায়নি তিনি। পরের দিন ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তিনি কাছে আসতে চাইলে পুলিশ তাঁকে নিষেধ করেন। কিছুক্ষণ পরে কাছে আসার অনুমতি দিলে জানতে পারেন উল্লেখিত স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তার দাবি, উল্লেখিত জায়গায় জোরপূর্বক কোন ধর্ষণ বা ডাকচিৎকার করলে তাঁরই শোনার কথা। এছাড়া পুলিস ও তাঁর কাছে কিছু জানতেও চায়নি।
স্থানীয় রাসেল বিশ্বাস জানান, ভুক্তভোগী মেয়েটির সাথে দীর্ঘদিন মালেক মুন্সির ছেলে ইমরানের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিছুদিন আগেও তাদেরকে হাতেনাতে ধরেছিল স্থানীয়রা তখন ইমরান মুন্সির বাবাকে ডেকে সমঝোতা করা হয়েছিল।
ভুক্তভোগী মেয়েটির নানা বাড়ির যুবক রাসেল জানান, ঘটনার মাসখানেক আগে মালেক মুন্সির ছেলে ইমরানকে মেয়েটির বসতঘরের পিছন থেকে ধরে আটকে রাখেন। ইমরানের বাবাকে খবর দিলে তিনি এসে তার ছেলেকে নিয়ে যান। ইমরানের বাবা বিএনপি করে বিধায় কোনকিছু আর হয়নি।
বিল্লাল বিশ্বাস জানান, ধর্ষণের ঘটনার আগের দিন রাতেও আমি ওই মেয়েকে জঙ্গল থেকে লাইভ মেরে বের হতে দেখেছি।মেয়েটির অত রাতে ওখানে কাজ কি ওখানেও কি ওর বাবার কবর।
ভুক্তভোগী মেয়েটির সহপাঠী রাজিব বলেন, ঘটনার মাস দেড়েক আগেও মুন্সিবাড়ি নিকটস্থ বাগানে অপ্রীতিকর অবস্থায় ধরেছিলো স্থানীয়রা। সেখান থেকেও মেয়েটি নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি আরো জানান ঘটনার দিন রাতে মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে রাস্তা দিয়ে আসতে দেখেছেন। মালেক মুন্সি স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার ছেলের বিষয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটির নানী জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তার নাতনী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা হলেও না আসায় তিনি তার মাকে ফোন করে জানান। তার নাতনীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলতে পারেননি তিনি। এশার নামাজের সময় বাসায় আসলে তিনি রাগারাগি করেছেন। তারকাছে কোন কিছু না বলেই ঘুমিয়ে পড়েন তার নাতনী। পরদিন বেলা বারোটার দিকে তিনি পাশের বাড়িতে যান। বাড়ি ফিরে নাতনীকে দেখেতে পাননি তিনি এবং তার কাছে কিছু বলেও যায়নি।
ঘটনার আলোচিত ইমরান মুন্সির বাবা মালেক মুন্সি জানান, লোকমুখে শুনেছেন তার ছেলের সাথে ভুক্তভোগী মেয়েটির প্রেমের সম্পর্কের কথা।মাস খানেক আগে মেয়েটির সাথে তার ছেলেকে আটকে রাখার বিষয়ে বলেন, তার ছেলে ইমরান ও মেয়েটি একই সাথে প্রাইমারী থেকে পড়াশোনা করে আসছে। বর্তমানেও একইসাথে কলেজে পড়ছে। আটকের দিন রাতে তার ছেলে বই আনতে মেয়েটির কাছে গিয়েছিল।
কথার একপর্যায়ে তিনি বলেন, বুঝলাম আমার ছেলের সাথে ওই মেয়েটির সম্পর্ক আছে। তাকে সে বিয়ে করতেও পারে। যেখানে সেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেতেও পারে।
তাইবলে চাচা ভাতিজা মিলে এ কাজ করবে? ইমরান বাড়ি না থাকার বিষয়ে বলেন, যেহেতু লোকমুখে পত্রিকায় ইমারানের নাম শোনা গেছে সে কারনেই সে পলাতক আছে।
উল্লেখিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি ঘটনার মূল হোতা ইমরান মুন্সি তাকেতো আসামি করা হয়নি।
ভুক্তভোগী মেয়েটি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাবাসী মনে করেন মালেক মুন্সির ছেলে ইমরান মুন্সিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসবে।
উল্লেখ্য ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জুলাই বিপ্লবে শহীদ কন্যা দলবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হন। পরদিন বুধবার ভুক্তভোগী মেয়েটি দু’জনকে আসামি করে দুমকী থানায় এজাহার দাখিল করলে ওই দিনই সাকিব মুন্সিকে আটক করে পুলিশ। পরদিন অপর আসামি সিফাত মুন্সিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর এলাকা থেকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত