চোখকে সুস্থ রাখতে এই ব্যায়ামগুলো করুন

| আপডেট :  ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫৫  | প্রকাশিত :  ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫৫

আত্মনির্মাণ ও আত্ম অনুভবের ক্ষেত্রে পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে শাণিত করার প্রয়োজন অপরিসীম। কারণ আমাদের অনুভবের ভিত্তি হচ্ছে পঞ্চ ইন্দ্রিয়। আর এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও কার্যকরী ইন্দ্রিয় হচ্ছে চোখ। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের শতকরা ৮৩ ভাগই আমরা পাই চোখের মাধ্যমে। তা সত্ত্বেও জ্ঞানের এত বড় মাধ্যমের যত্ন আমরা যথাযথভাবে নেই না। এই না নেয়ার কারণে দ্রুত আমাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। চশমার কাচের পাওয়ার অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। অথচ একটু যত্ন নিলেই আমরা চোখের স্বাভাবিক শক্তি দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারি। চোখের যত্ন নেয়ায় সারাদিনে যে সময় ব্যয় হবে তা মাত্র কয়েক মিনিট। আর এই যত্ন নেয়ার পদ্ধতিও বেশ সহজ।

চোখের যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার। শাক সবজি একটু বেশি পরিমাণে খেতে হবে। শীতের দিনে গাজর, বাঁধাকপির পরিমাণটা একটু বেশি; ছোট মাছ— বিশেষত মলা-ঢেলা, কাচকি প্রভৃতি। আর চোখের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাঁটি দুধ। প্রতিদিন আধ লিটার দুধ আপনার চোখের দৃষ্টিকে বহুদিন পর্যন্ত অক্ষুণ্ন রাখতে এবং চোখকে ছানি পড়া বা গ্লুকোমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

চোখের ব্যায়াম
চোখকে প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী করার জন্যে রয়েছে খুব সাধারণ চোখের ব্যায়াম। এটা আপনি ঘরে অফিসে যে কোন স্থানে বসে করতে পারেন। শুধু যখন ব্যায়ামটি করবেন তখন চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা কিন্তু শরীর শিথিল করে বসতে হবে। শরীরের কোন পেশী অহেতুক শক্ত করে রাখবেন না। প্রথমে দৃষ্টি সামনে সোজাসুজি রাখুন। ৫ সেকেন্ড পর মুখ সোজা রেখে চোখের মণি ডান দিকে ঘোরান। ৫ সেকেন্ড এভাবে থাকার পর চোখের মণি ওপরে নিন। ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি বাম দিকে নিন। আবার ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি নিচে নিন। ৫ সেকেন্ড নিচের দিকে রাখুন। চোখ আপনার একবার ঘুরে এলো। এভাবে ৫ বার ক্রমান্বয়ে চোখের মণি ডানে, ওপরে, বামে, নিচে রেখে ব্যায়ামটি করুন। এরপর পুরো প্রক্রিয়া উল্টে দিন। অর্থাৎ প্রথমে বামে, তারপর ওপরে, তারপর ডানে, তারপর নিচে। এভাবে ৫ বার ডান থেকে বাম দিকে আবার ৫ বার বাম থেকে ডানে করলেই ব্যায়াম সম্পন্ন হবে।

এছাড়া চক্ষু চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম বেটস চোখের যত্ন ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্যে বেশ কয়েকটি সুন্দর ও সহজ নিয়ম প্রচলন করেছেন। এই নিয়মগুলো সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ব্যাপারে তিনি একটি বই লিখেছেন ১৯১৯ সালে ‘বেটার আই সাইট উইদাউট গ্লাসেস’ নামে। তাঁর পরামর্শ মত কয়েকটি সহজ নিয়ম পালন করে বিশ্বে বহু মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার বা সমুন্নত করেছেন। বেটস-এর পরামর্শ মত চোখের যত্নের কয়েকটি সহজ প্রক্রিয়া :

চোখ ঢাকা
আরাম করে শিথিলভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। সামনের টেবিলে কনুই রেখে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢাকুন। এমনভাবে ঢাকুন, চোখের পাতা যেন হাতের তালু স্পর্শ না করে। এরপর খুব মনোহর প্রাকৃতিক দৃশ্য কল্পনা করুন। বেড়াতে গিয়ে বা টিভিতে কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য মোহিত করে থাকলে তা ভিজুয়ালাইজ করুন। কাজ করতে করতে বা পড়তে পড়তে যখনই আপনার মনে হয় চোখ ক্লান্ত হয়ে গেছে বা চোখে ব্যথা করছে, তখনই আপনি ৫ থেকে ১০ মিনিট এভাবে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে কল্পনায় সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যে হারিয়ে যান। যে দৃশ্য কল্পনা করছেন, তার রং, গন্ধ, শব্দ সব পুরোপুরি অনুভব করার চেষ্টা করুন। ডা. বেটস বলেছেন মনের চোখে কোন জিনিস দেখলে বাস্তবে তা আরও বেশি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

পলক ফেলুন
দশ-পনেরো সেকেন্ড পরপর চোখের পাতা মুহূর্তের জন্যে বন্ধ করার অভ্যাস করুন। এক দৃষ্টিতে না তাকিয়ে মাঝে মাঝে চোখের পাতা পড়তে দিন। এতে চোখ পরিষ্কার ও পিচ্ছিল থাকবে।

কাছে ও দূরে তাকানো
কাছে ও দূরে তাকানোর অভ্যাস বাড়ান। এই তাকানোর অনুশীলন আপনি দুই হাতের দুআঙ্গুল দিয়েও করতে পারেন। ডান হাতের তর্জনী চোখ থেকে আধ হাত দূরে রাখুন। আর বাঁ হাত যতটা সম্ভব দূরে নিয়ে তর্জনী সোজা করে রাখুন। এবার প্রথমে ডান— অর্থাৎ কাছের হাতের তর্জনীর দিকে দুই চোখ দিয়ে ৫ সেকেন্ড এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন। ক্ষণিকের জন্যে চোখের পাতা ফেলুন। এরপর আবার দূরে অবস্থিত বাম হাতের তর্জনীর ডগায় এক দৃষ্টিতে ৫ সেকেন্ড তাকান। ক্ষণিকের জন্যে পলক ফেলুন। আবার কাছের আঙুলের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এভাবে ১০ বার এই অনুশীলন করুন।

পানির ঝাপটা
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেয়া। বেসিনের সামনে গিয়ে চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে প্রথমে ২০ বার ঈষদুষ্ণ পানির ঝাপটা দিন। এরপর ২০ বার ঠাণ্ডা পানি ঝাপটা দিন। আবার রাতে শোয়ার আগে শেষ কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেয়া। এবারে উল্টো ভাবে। অর্থাৎ প্রথম ২০ বার ঝাপটা দেবেন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে এবং পরের ২০ বার ঝাপটা দেবেন ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে। এতে চোখে রক্ত চলাচল বাড়বে। চোখ হবে প্রাণবন্ত।

চোখের এই যত্ন বেশ উপকারী। এ সংক্রান্ত একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রখ্যাত লেখক অডলাস হাক্সলী বয়স যখন ৪৫, তখন তাঁর দৃষ্টিশক্তির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। পড়ার জন্যে তিনি ব্যবহার শুরু করেন মোটা ম্যাগনিফাইং গ্লাসের চশমা। এ সময় তিনি বেটস মেথডের কথা শোনেন এবং ২ মাস এই পদ্ধতির চর্চা করার পর তিনি চশমা ছাড়া পড়তে সক্ষম হন। পরে হাক্সলী নিজেও চোখের যত্ন বিষয়ে একটি বই লেখেন। বইটির নাম ‘দি আর্ট অব সিইং’।

তাতে তিনি লিখেছেন, শুধুমাত্র তিনিই নন, বেটস মেথডের সহজ নিয়ম পালন করে হাজার হাজার রোগী তাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্য এ উন্নতি সবসময়ই নির্ভর করে কতটা মনোযোগ ও একাগ্রতা নিয়ে আপনি অনুশীলন করছেন তার ওপরে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত