কক্সবাজারে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল ও মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবিতে গণস্বাক্ষর প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত

| আপডেট :  ১৫ জুলাই ২০২৩, ০৩:০৩  | প্রকাশিত :  ১৫ জুলাই ২০২৩, ০৩:০৩

কক্সবাজারসহ সকল এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বাতিল ও মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গণস্বাক্ষর প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ১২ জুলাই’২৩ বিকাল ০৩টায় কক্সবাজারে প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন সংশপ্তক, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সর্টারনাল ডেবট (বিডাব্লিউজিইডি) এর যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

প্রচারাভিযানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সংশপ্তক ডেপুটি ডিরেক্টর অগ্রদূত দাশগুপ্ত, প্রোগ্রাম ফোকাল কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম, শামীমা আক্তার, মোঃ আবু ছায়েদ মিয়া, মোঃ আসিফ, মোঃ জাবেদ, কান্তা মল্লিক, প্রমুখ।

সমাবেশে অগ্রদূত দাশগুপ্ত বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বাজার তুলনামলূক হারে অত্যন্ত অশান্ত। ২০২১ সাল থেকে একনাগাড়ে সারাবিশ্বে এলএনজির দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়ছে, যা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং মূল্যস্ফীতির কারণে উচ্চ থেকে উচ্চতর হয়েছে। বাংলাদেশ একটি দক্ষিন-এশীয় দেশ, যার গ্যাসের চাহিদার ২০% তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের এলএনজি আমদানির সক্ষমতা ব্যপকহারে হ্রাস পেয়েছে। অতিরিক্ত দাম দিয়ে এলএনজি ক্রয় বন্ধ করতে সম্পূর্ণরূপে বাধ্য হয়েছে এবং দেশের জ্বালানী ও বিদ্যুতের ঘাটতি, মূল্য বৃদ্ধির অস্থিরতা এবং সরবরাহের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সূয্য যখন দেয়, কেন করবো গ্যাস আমদানী, ২০৪১ সালের মধ্যে জলবায়ু-সহিষ্ণু মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ, ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে মজিুব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান (এমসিপিপি) বাস্তবায়ন করে তাহলে অন্ততপক্ষে প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি সাশ্রয় হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন এলএনজির উৎপাদন ও পরিবহন খরচ আনপুাতিক হারে অনেক বেশি; উৎপাদন ও পরিবহন খরচ এলএনজির মোট দামের ৮৫% পর্যন্তও হতে পারে। সর্বপ্রথম ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যে, ০.৬৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানী এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এলএনজি যাত্রায় অনপ্রবেশ করে। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলএনজি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করেও বিদুৎ সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

২৪০ গিগাওযাট এর বায়ু এবং ১৫০ গিগাওয়াটের সৌর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, ২০২০ সালে বিদ্যুতের মিশ্রণের মাত্র ১.৩২% ছিল নবায়নযোগ্য শক্তি। পিডিবির তথ্য অনযুায়ী, দেশে ১৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রয়েছে যার মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ৫৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌর ও বায়ুবিদুতে বিনিয়োগ করলে বর্তমান সংকট এতটা গভীর হতো না।
বক্তারা আরও বলেন নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বাংলাদেশের প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে তূলনামলূক হারে নন্যূতম খরচে ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার, ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে কমপক্ষে ১০% বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছিলো, সেখানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রতি দিন মাত্র ৭৩০ মে গাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যেটি মোট উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৩.৪৭%। নবায়নযোগ্য উৎসকে যথার্থ গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে ২০২১ সালে ও নির্ধারিত লক্ষের অর্ধেকও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উৎস নিয়ে যে সবপ্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে উৎপাদন এবং সরবরাহের আওতায় এলে এলএনজি আমদানি বাবদ ব্যয় ২৫% কমানো সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত