একই বিমানে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে মোদির নির্বাচনী সঙ্গী নীতিশ, কোন পথে পার্লামেন্ট
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জয় পেলেও তার দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এতে করে সরকার গঠনের জন্য দলটিকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে জোটের শরিক দলেরে উপর। বিশেষ করে তেলেগু দেশাম পার্টির (টিডিপি) চন্দ্রবাবু নাইডু ও জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডির (ইউ) নীতিশ কুমারের ওপর। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জল্পনাকল্পনা চলছে, এই দুই নেতার সমর্থন যেদিকে যাবে, তারাই এগিয়ে যাবে সরকার গঠনের পথে। কিন্তু এর মধ্যেই সামনে এসেছে আরেক ঘটনা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। লোকসভার ৫৪৩ আসনের ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। তবে এবারের নির্বাচনে বেশ চমক দেখিয়েছে গত দুই লোকসভা নির্বাচনে চরমভাবে পিছিয়ে পড়া কংগ্রেস। এবার দলটি জয় পেয়েছে ৯৯ টি আসনে।
জোট হিসেবে এনডিএ- জয় পেয়েছে ২৯৩ আসনে এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’ দখলে গেছে ২৩৩টি আসন। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে পেয়েছে ১৭টি আসন। তবে দল হিসেবে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ২৪২টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। এছাড়া তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে টিডিপি (তেলেগু দেশাম পার্টি) পেয়েছে ১৬টি এবং বিহারের নিতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) পেয়েছে ১২টি আসন। এই নিতীশ কুমার ভারতের রাজনীতিতে দল পাল্টানোর হিড়িকে সবাইকে ছাড়িয়ে।
এদিকে, সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার (৫ জুন) শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের।
এর আগে, মঙ্গলবার (৪ জুন) খবর পাওয়া যায়, কিং মেকার চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারকে ইন্ডিয়া জোটে ভেড়াতে তাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই আলোচনা কোনোভাবে সফল হলে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার মোদির স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
কারণ, টিডিপি আর জনতা দল যদি এনডিএ ছেড়ে যায় তাহলে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের কোটা পূরণে ব্যর্থ হবে বিজেপি। অন্যদিকে নাইডু-নীতিশের ২৮ আসনের ওপর ম্যাজিক ফিগার ২৭২ এর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে ইন্ডিয়া জোট। তখন মাত্র ১৩টি আসন দরকার হবে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বধীন জোটের।
ভোটারদের দ্বিধাভক্ত রায়ে এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই ‘রহস্যজনক গতিবিধি’ দেখা গেছে নীতিশ কুমারের। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর ইন্ডিয়া জোটে থাকা আরজেডির শীর্ষ নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে একই উড়োজাহাজে নয়াদিল্লি সফরে যান নীতিশ।
নাইডু-নীতিশকে নিয়ে বিজেপির শঙ্কার কারণ কী
২০১৪ সালে মোদির এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে একা নির্বাচন করেন নীতিশ কুমার। ২০১৫ সালে লালু যাদবের সঙ্গে মিলে নয়া জোট করেন। দুই বছর না যেতেই এনডিএ জোটে যুক্ত হন নীতিশ। এরপর ২০২২ সালে আবারও জোট থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এ বছর আবার যুক্ত হন। ফলে নীতিশের ডিগবাজী নিয়ে বিজেপির শঙ্কা নতুন কিছু নয়।
এছাড়া চন্দ্রবাবু নাইডুও এনডিএ জোটে থাকবেন কিনা এখনও তা খোলাসা করেননি। সবমিলিয়ে, বিজেপির রাজনৈতিক ভাগ্য এখন নাইডু-নীতিশের ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে,ভারতে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল যদি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে যায় তবে রাজনৈতিক স্থবিরতা দেখা যেতে পারে। এমন একটি শঙ্কার কথা ভেবে আগেভাগেই বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত সাত বিচারপতি।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ভারতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং ‘প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নজির’ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুকে এ বিষয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ওই সাত বিচারপতি। খবর ইন্ডিয়া টুডে। সাত বিচারপতি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দলগুলোর মধ্যে খোলামেলা আলোচনার বিধান রেখে সংবিধানে পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত