লোহালিয়া ও পায়রা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক
পটুয়াখালীর লোহালিয়া ও পায়রা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হুমকিতে পড়েছে দুমকী উপজেলার চরগরবদী, সন্তোষদি ও পাংসিঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েকদিন ধরে নদী থেকে ৩/৪টি ড্রেজার মেশিনে পালাক্রমে অবাধে বালু কেটে বলগেট ও ট্রাক্টর/মাহেন্দ্র দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে এলাকার একটি প্রভাবশালীচক্র।
অপেক্ষাকৃত ছোট নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে তীরবর্তী এসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি দিলেও শক্তিশালী এ চক্রটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, জেলার লোহালিয়া ও পায়রা নদীর চরগরবদি, সন্তোষদি ও পাংসিঘাট এলাকা থেকে গত কয়েকদিন যাবৎ ৩/৪টি ড্রেজার মেশিনে পালাক্রমে বালু কেটে বলগেটে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের পাশাপাশি তাদের নির্দিষ্ট ফিল্ডে বালু জমা করছে। ওই স্টক থেকে জমানো বালু তারা খুচরা ক্রেতাদের কাছে বেচা-বিক্রির ব্যবসা করছে। বিক্রিত বালু ট্রাক্টর/মাহেন্দ্র বোঝাই করে বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। আবার কিছু ট্রাক্টর/মাহেন্দ্র চালক নিজেরাই ওখান থেকে কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।
এভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী চরগরববি, সন্তোষদি ও পাংসিঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ওইসব এলাকায় বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হলেও অজ্ঞাত কারণে নেয়া হচ্ছে না কোনো আইনি ব্যবস্থা।
বালু পরিবহনকারী ট্রাক্টর চালকরা জানান, তারা প্রতি ট্রাক্টর বালু ২৫০-৩০০ টাকা দরে কিনছেন। এরপর এগুলো তারা বিক্রি করেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে। প্রত্যেক ট্রাক্টর/মাহেন্দ্র চালক প্রতিদিন গড়ে ৮-১০টি ট্রিপ দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর/মাহেন্দ্র বালু পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। এসব বালু দুমকিসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
মুরাদিয়া ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবাদ করেও নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। বালু উত্তোলন করায় সন্তোষদি ও চরগরবদি এলাকায় বর্ষাকালে ভয়াবহ নদীভাঙন ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও জানান, চরগরবদি গ্রামের বাসিন্দা মিজান গাজী, হুমায়ুন কবির, আল-আমীন গাজীসহ প্রভাবশালী একটি চক্র এ অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসায় জড়িত রয়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার ব্যবসায়ি মিজান গাজী ও আল-আমিন বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত। নদীতে আমাদের অনেক জমি চলে গেছে। এসব জমি থেকে বালু তুলে বিক্রি করছি।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আল ইমরানের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পায়রা ও লোহালিয়া নদীর কোথাও বালু মহল ইজারা নেই। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলমান আছে। এর আগে কয়েক দফায় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বার্জ, বলগেট ও ভেকু আটক ও জরিমানার পর অনেকাংশে কমছিল। এত ছোট নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত