মুনিয়া ১০ দিন ক্লাস করেছে, টিসি বানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ

| আপডেট :  ০৫ মে ২০২১, ০৭:২০  | প্রকাশিত :  ০৫ মে ২০২১, ০৭:২০

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্লাটে আত্মহত্যা করা মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন না। তিনি কলেজে ভর্তি হয়ে মাত্র ১০ দিন ক্লাস করেন এবং একাদশ শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সব বিষয় মিলিয়ে ১৭ নম্বর পান। এরপর আর কলেজে আসেননি।

কলেজটির প্রধান অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি এম আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মুনিয়াকে কলেজ থেকে টিসি দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু যোগাযোগ করেও তার পরিবারের কাউকে কলেজ কর্তৃপক্ষ পায়নি টিসি দিতে।

২০১৮ সালে এই কলেজের একাদশ শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল মুনিয়া। প্রধান অধ্যক্ষ জানান, সেবার মাত্র ১০টি ক্লাসে অংশ নেয় মুনিয়া। একাদশ শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় মাত্র ১৭ নম্বর পেয়েছিল সে। এরপর একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ফলে মুনিয়াকে দ্বাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণের অনুমতি দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি এম আসাদুজ্জামান বলেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নেওয়ার জন্য মুনিয়ার বাবা-মায়ের অবর্তমানে তার বড় বোন নুসরাত জাহানকে কলেজ থেকে অসংখ্যবার টেলিফোন করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া দেননি মুনিয়ার বোন। ফলে টিসি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

মুনিয়া কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রী হিসেবে থাকলেও মূলত তিনি কোনোভাবেই কলেজটির দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নন বলে জানান অধ্যক্ষ।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মুনিয়া কলেজে ছিল অনিয়মিত। একাদশের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী তাকে দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে কলেজের নিয়ম অনুযায়ী তাকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে টিসি দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ড থেকে একটা পারমিশনের দরকার হয়। আমরা তার অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। বিশেষ করে তার বড় বোন নুসরাত জাহানকে অনেকবার টেলিফোন করেছি। তাদের আমরা বলেছি টিসি নিতে। কিন্তু তারা আমাদের কথায় সাড়া দেয়নি, এমনকি টিসি গ্রহণ করেননি। তাই মুনিয়ার বিষয়টি ওভাবেই রয়ে গেছে।

মুনিয়াকে কলেজটির ঝরেপড়া শিক্ষার্থী আখ্যা দিয়ে জি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু তার অভিভাবক টিসি গ্রহণ করেননি শুধু সেই খাতিরে বলতে হয় সে আমাদের ছাত্রী। ফর্মালি টিসি গ্রহণ করলে সে আমাদের এখানে ছাত্রী হিসেবে গণ্য হতো না। এ ক্ষেত্রে আপনারা তাকে বলতে পারেন ঝরেপড়া শিক্ষার্থী।’

মুনিয়ার মূল অভিভাবক হিসেবে বাবা-মা ছিল না বলে তার শিক্ষাজীবনের এ দুরবস্থা বলে মনে করেন অধ্যক্ষ।

স্থানীয় সূত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, স্কুলজীবন থেকেই উচ্চাভিলাষী ছিলেন মুনিয়ার। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে অভিনয় জগতের প্রতিও নাকি আগ্রহ ছিল তার। এই জগতের দু-একজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা নিয়েও বিভিন্ন সময় মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে ‍মুনিয়া ও তার পরিবারকে।

মুনিয়ার ঘনিষ্ঠজন ও সহপাঠীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তাদের সঙ্গে মুনিয়ার জীবনযাত্রায় ছিল অনেক তফাত। পড়াশোনাতেও অনিয়মিত ছিলেন মুনিয়া। তার বোন নুসরাত জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকায় আসার আগে মুনিয়া কথা দিয়েছিল এইচএসসির ফরমফিলাপ করবে। পরীক্ষা দেবে। আমি তার কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। ‘

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘বাবা-মাহারা মুনিয়ার বড় বোন ছিলেন অভিভাবক। কিন্তু তিনি প্রকৃত অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে মুনিয়ার বয়সী তরুণ-তরুণীরা অনেক সময় না বুঝে বিপথে পা বাড়ায়। এ জন্য পরিবার-সমাজও দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত