হাসিনার অনুরোধ না রাখলেও ড. ইউনূসের কথা রাখছে মালয়েশিয়া

| আপডেট :  ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০  | প্রকাশিত :  ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০

শেখ হাসিনা সরকারের অনুরোধ অগ্রাহ্য করলেও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধ রাখল মালয়েশিয়া। নির্ধারিত সময়ে দেশটিতে যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে নিয়োগ দেবে। ঢাকা সফরে এসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার ‘পুরনো বন্ধু’ ড. ইউনূসকে পাশে নিয়ে শুক্রবার হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও যেতে না পারা ৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এ সময় ড. ইউনূস এই সংখ্যা ১৮ হাজার বলে আনোয়ার ইব্রাহিমকে মনে করিয়ে দেন।

তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপে ৭ হাজার জনের যাওয়ার উদ্যোগ দ্রুত নেওয়া হবে। সব সন্তোষজনক হলে বাকিদেরও ক্রমান্বয়ে নেওয়া হবে।
প্রায় ৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খোলে বহুল আলোচিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কর্মী পাঠানোর কাজ পেয়েছিল তৎকালীন চার এমপি-মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানসহ মালয়েশিয়ার সরকারের বাছাই করা ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি।

যেগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিত। পরে এতে যুক্ত হয় আরো ৭৫ এজেন্সি।
মালয়েশিয়া যেতে বাংলাদেশ সরকার কর্মী প্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও সিন্ডিকেটে নিয়ন্ত্রক এবং এজেন্সিগুলো সাড়ে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী, কর্মী প্রতি ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

গত ৩১ মে মাসে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। সেদিন পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ কর্মীর চাহিদাপত্রের বিপরীতে জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন যেতে পারেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ৭ হাজার জন উড়োজাহাজের টিকিট ও ৯ হাজার ৯৭০ জন নিয়োগকর্তা থেকে প্রয়োজনীয় নথি নিতে না পারায় যেতে পারেননি।
এই কর্মীদের পাঠাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগের সময় বৃদ্ধিতে একাধিকবার অনুরোধ করেছিল।

তবে মালয়েশিয়া সরকার, বারবারই তা অগ্রাহ্য করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, যেতে না পারা ৭০ শতাংশ কর্মী টাকা ফেরত পেয়েছে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, টাকা ফেরতের হার মাত্র ২৫ শতাংশ।

কর্মীরা জানিয়েছে, তারা ভিটা, জমি ও গরু বিক্রি করে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দিলেও ফেরত পেয়েছেন ৭৮ হাজার টাকা করে।

ঝিনাইদহের জহিরুল ইসলাম শুক্রবার টাকা ফেরত না পেয়ে পথে বসে গেছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর এজেন্সি মালিকরা পালিয়ে গেছেন।

সিন্ডিকেটের বাংলাদেশ অংশের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপন কানাডা চলে গেছেন সরকার পতনের পর। বিদেশে রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আওয়ামী লীগের এমপি নিজামী হাজারী, বেনজির আহমেদসহ সিন্ডিকেটে থাকা বাকি এজেন্সির মালিকরাও পলাতক।

৩১ মে থেকে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। আবার খোলার আলাপের সঙ্গে আগের দু’বারের মতো সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা।

‘সিন্ডিকেটের তৎপরতা’র প্রশ্নে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এ ক্ষেত্রে অতীতের পদ্ধতি ভেঙে দিয়েছেন তারা। এখন ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ হচ্ছে। প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং তথাকথিত সিলেক্টেড লোকদেরও কঠোরভাবে নীতি মানতে হবে।

ভুয়া চাকরি এবং ‘ভিসা বিক্রির’ কারণে মালয়েশিয়ায় যাওয়া হাজার হাজার কর্মী প্রতিশ্রুত কাজ পাননি। শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই ১৮ হাজার (কর্মী) সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে এবং এটা (যেতে না পারা) তাদের দোষ নয়। সুতরাং প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিবর্তন করা আমাদের দায়িত্ব।’

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের অনেকে কাজ না পেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বৈধতা না থাকায় অনেক ‘দাসে’ পরিণত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ‘কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়। আমাদের মাথাব্যথা হলো এটা নিশ্চিত করা যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা যেন ঠিকমতো মানা হয়। আমাদের শ্রমিক দরকার এবং তাদের প্রতি যেন আধুনিক দাসের মতো আচরণ করা না হয়’।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে যে সমালোচনা হয়, সেটা ‘উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সরকার প্রধান হওয়ার আগে দুই দফায় প্রায় আট বছর জেল খাটা এ নেতা বলেন, ‘আমি নিজেও এই বাজে সিস্টেম এবং নির্যাতনের সিস্টেমের ভুক্তভোগী।’

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত