ক্ষুব্ধ ইশরাক চলে গেলেন আমেরিকা

| আপডেট :  ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৫:২৭  | প্রকাশিত :  ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৫:২৭

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নতুন কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ পাননি ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কমিটি ঘোষণার পর দিন মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে একটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকা চলে গেছেন। শিগগিরই তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি দেখা করতে চান।

ইশরাকের ঘনিষ্ঠ একাধিক বিএনপি নেতা জানান, কমিটি চূড়ান্ত হওয়ার খবর আগেই জেনেছিলেন ইশরাক। তাই তিনি আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষিণের সদস্যসচিবের পদপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। আহ্বায়ক হিসাবে হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সদস্য সচিব হিসাবে তাকে রাখার জন্য ইশরাক বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতাসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধও করেছিলেন। দায়িত্বশীল দুজন সিনিয়র নেতা তাকে সদস্য সচিব করার ব্যাপারে আশ্বস্তও করেন।

কিন্তু কমিটিতে তাকে এক নম্বর সদস্য রাখা হয়। নেতারা জানান, কমিটি ঘোষণার পরপরই ইশরাকের সঙ্গে কয়েকজন নেতা কথা বলেন, দেখাও করেন। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হলেও ইশরাক তাদের জানান, ‘আমার নেতা তারেক রহমান। তার নির্দেশ মতোই রাজনীতি করছি। ভবিষ্যতেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মেনে সবাই মিলেমিশে কাজ করব।’

ইশরাকের ব্যক্তিগত সহকারী সুজন মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টায় একটি ফ্লাইটে তিনি (ইশরাক) আমেরিকায় যান। আগে থেকে এ সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। ব্যক্তিগত কাজে তিনি সেখানে গেছেন।

অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনের বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য তিনি। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির টিকিটে অংশ নেন ইশরাক। সে সময় উচ্চ শিক্ষিত তরুণ নেতা ইশরাক ব্যাপক পরিচিতি পান। পরবর্তীতে বিএনপির সব কর্মসূচিতে তাকে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়। এছাড়া মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাকে ঘুরে ঘুরে দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করতে দেখা গেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির এক কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠির মার খেয়েও নিজ দলের কর্মীকে জাপটে ধরে নিরাপদে নিয়ে যান ইশরাক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। এমন সাহসিকতার জন্য সেদিন বিএনপি মহাসচিবসহ অনেকে তার প্রশংসা করেন।

উল্লেখ্য, সোমবার হাবিব উন নবী খান সোহেল ও এম এ কাইয়ুমের নেতৃত্বে মহানগর দক্ষিণ-উত্তরের কমিটি ভেঙে দিয়ে আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে উত্তরের ৪৭ সদস্য এবং আবদুস সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণের ৪৯ সদস্যের নতুন আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উত্তরের সদস্য সচিব হয়েছেন আমিনুল হক এবং দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু।

বাদ পড়া ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের তালিকা : বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণের বিলুপ্ত কমিটির বাদ পড়া সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ক্ষোভ প্রশমনে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সোহেলের বাসায় পুলিশ যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে নানা সন্দেহ : এদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের খোঁজে তার বাসার গেটে দুই দফা পুলিশ যায় বলে বিএনপি নেতা ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা সন্দেহ ও অবিশ্বাস শুরু হয়েছে। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি-সোহেলের খোঁজে তার বাসার গেটে দুই দফা পুলিশ গিয়েছিল। সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের একাধিক নেতার প্রশ্ন-সোহেলকে কেন খুঁজবে পুলিশ? সোহেলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তার তো মন খারাপ হওয়ার কথা। এ কারণে নানা মহল সোহেলকে দিয়ে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করানোর কথা। কিন্তু সোহেল তো তা করেননি। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, নতুন কমিটি সম্পর্কে অনেকে নানা কথা বলছেন। কেউ বলছেন, সোহেলকে ভয় দেখানোর জন্যই নিজ দলীয় নেতারা এসব করাচ্ছেন।

সোহেলের কন্যার আবেগঘন স্ট্যাটাস : নতুন কমিটি ঘোষণার পর হাবিব উন নবী খান সোহেলের মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন-‘দীর্ঘদিন পর মাথাটা হঠাৎ চিলিবিলি করে উঠল। এতদিন শুনেছি গাধার পিঠে মেধা ঘোরে, আজ হঠাৎ দেখছি ঘটনার উল্টোটাও হতে পারে। পৃথিবীটা বড়ই বিচিত্র জায়গা। হ্যাঁ, ভাবছি এমন এক সত্ত্বার কথা, যিনি প্রায় দুই বছর আগে আমার বাবাকে সরকারের পুলিশ বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল অর্থাৎ ধরিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বাবাকে টানা ১০ মাসে ৬৫০’র অধিক রাজনৈতিক মামলা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলে জেলে কাটাতে হয়েছে। নিজের ঘরের মানুষকে যে হাসিমুখে ছুরিকাঘাত করতে পারে বিনাদোষে, তার মস্তিষ্কের সুস্থ বিক্রিয়া নিয়ে একজন মনোবিজ্ঞানী হিসাবে আমি সন্দিহান।’

সোহেল কন্যা আরও লেখেন, ‘সে যাই হোক, শুনেছি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’। আচ্ছা, যদি কারো নামের পাশে ১/১১, সংস্কারপন্থি এবং কেন্দ্রীয় অফিসের তালা ভাঙার মতো বিশেষ কিছু শব্দ জড়িয়ে যায়, তাকেও কি বিশ্বস্ত বলা যায়? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছি, কেউ পেলে জানাবেন। আমার ক্ষোভের কারণটা বলি-বাবা জেলে থাকার ১০ মাসে আমাদের দৌড়াতে হয়েছে এক জেলা থেকে আরেক জেলার বিভিন্ন জেলে। এমন অনেক জেলায় গিয়েছি যেখানে আমরা সম্পূর্ণ নতুন, কোথাও কাউকেই চিনি না-জানিনা। কি অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন আমার বাবা এবং আমরা। আজ হঠাৎই শুনি, এ দৌড় গল্পের পুরোটার মূল্যই শূন্য!! খলনায়ক, নায়ক সব চরিত্র মিলেমিশে খিচুড়ি। অবাক পৃথিবী, অবাক করলে তুমি, ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘুণপোকারা ঘুরে বেড়ায় আমার চারণভূমি। আহ্বায়ক কমিটির অন্য সব সদস্যের জন্য রইল আন্তরিক অভিনন্দন।’

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত